বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। এজন্য অতিরিক্ত গতি, অদক্ষ চালক এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিষয়টি দায়ী করা হচ্ছে। এ ছাড়া গাড়ি চালানোর সময় টানেলের অভ্যন্তরে সৌন্দর্য উপভোগ এবং গাড়ির গতি বাড়িয়ে-কমিয়ে সেলফি তোলার সময়ও অসাবধানতাবশত দুর্ঘটনা ঘটছে। গত বছরের ২৮ অক্টোবর টানেল উদ্বোধন হয়। এর পর থেকে এ পর্যন্ত ছোট-বড় সাতটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় দু’জনের প্রাণহানির পাশাপাশি ১৯ জন আহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয় টানেলের স্থাপনার বিভিন্ন অংশ।
সর্বশেষ গত ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় টানেলের ভেতরে একে একে চারটি গাড়ির সংঘর্ষ হয়। এতে টানেলের ডেকোরেশন বোর্ড ভেঙে যায় ও অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্ঘটনায় আহত হন পাঁচজন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী তানভীর রিফা বলেন, টানেলে যাতে দুর্ঘটনা এড়ানো যায় সেজন্য গাড়ির গতিসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক সময় অনেক বেপরোয়া চালক অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করেন। এতে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। এ ছাড়া চালকের অদক্ষতা ও গাড়ির ফিটনেসের বিষয়টি তো রয়েছেই।
টানেল উদ্বোধনের এক দিন পর ৩০ অক্টোবর টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে টোল প্লাজায় একটি প্রাডো গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে প্রথম দুর্ঘটনায় পড়ে। এর দু’দিন পর ৩ নভেম্বর টানেলের ভেতরে একটি প্রাইভেটকারকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় বেপরোয়া গতির বাস। এই ঘটনায় কারের ৪ যাত্রী আহত হন। কারটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
গত ১৬ জানুয়ারি সকালে টানেল সড়কের বৈরাগ এলাকায় দ্রুতগতির মাইক্রোবাসের ধাক্কায় টানেলের সিকিউরিটি পোস্ট ভেঙে দায়িত্বরত একজন নৌবাহিনীর সদস্যসহ সাতজন আহত হন। এর আগে ১৮ জানুয়ারি সকালে টানেলের ভেতর চাকা ফেটে পিকআপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা দেয় টানেলের টিউবে। গত ৩০ জানুয়ারি ভোরে টানেলের সংযোগ সড়কের আনোয়ারা প্রান্তে ট্রাকের ধাক্কায় এক সাইকেল আরোহী নিহত হন। গত বছরের ১০ নভেম্বর টানেলের টোলবুথের মুখে যাত্রীবাহী বাস উল্টে একজন নিহত ও অন্তত ১২ জন আহত হন।
তখন পতেঙ্গা থানার ওসি কবিরুল ইসলাম জানান, বাসটি পতেঙ্গা থেকে যাত্রীদের নিয়ে টানেল পরিদর্শনের জন্য যাচ্ছিল। বাসে প্রায় ৫০ জন যাত্রী ছিলেন। চালকের অদক্ষতার কারণে গাড়ি হয়তো উল্টে গেছে বলে মনে করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
টানেলের সর্বোচ্চ গতিসীমা হচ্ছে ৬০ কিলোমিটার। কিন্তু অনেক চালক নিয়ম ভঙ্গ করছেন। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। দুর্ঘটনা রোধে টানেলের ভেতরে-বাইরে স্পিড ক্যামেরা বসানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া টানেলে সেলফি তোলা, গতি কমানো-বাড়ানো, ইচ্ছেমতো গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। এটা টানেল কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে।
তথ্যমতে, উদ্বোধনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে এক মাসে গাড়ি চলাচল করেছে এক লাখ ৭৪ হাজার ৮৭১টি। সে হিসেবে প্রতিদিন গড়ে গাড়ি চলেছে ৫ হাজার ৮২৯টি। সমীক্ষা অনুযায়ী এর চেয়েও বেশি গাড়ি চলাচলের কথা। কিন্তু গাড়ির চাপ কম থাকার পরও দুর্ঘটনা ঘটছে।