ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Advertisement
Advertisement

যে পাঁচ কারণে কর্ণফুলি টানেলে গাড়ি চলছে কম

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আপডেট: ২৩:৪৫, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

যে পাঁচ কারণে কর্ণফুলি টানেলে গাড়ি চলছে কম

কর্ণফুলি

প্রতিদিন যে সংখ্যক যানবাহন চলাচলের কথা, সেই সংখ্যক যানবাহন চলাচল করছে না দেশের একমাত্র টানেল কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে। অবস্থা এমনই প্রতিদিন টানেলটি রক্ষণাবেক্ষণে যে ব্যয় হচ্ছে তাও তুলে আনা যাচ্ছে না। এক ধরনের ‘শ্বেত হস্তিতে’ পরিণত হয়েছে এই টানেল। চীনের ঋণ সহায়তায় টানেলটি নির্মাণ করা হয়। তেমন আয় না আসলেও গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ায় এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ঋণের কিস্তি পরিশোধ।

সাড়ে ১০ হাজার কোটির বেশি টাকা ব্যয়ে করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর যানবাহন চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে গত ১৮ আগস্ট পর্যন্ত এই টানেল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার ৮২টি যানবাহন এ টানেল দিয়ে পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে আবার একটি অংশ ট্যুরিস্টদের গাড়ি। টানেল নির্মাণের পর অনেকে গাড়ি নিয়ে টানেল ঘুরে আসছেন। এটা কমে গেলে যানবাহন চলাচলের সংখ্যা আরও কমে আসবে। অথচ টানেল নির্মাণের আগে করা সমীক্ষায় দাবি করা হয়, চালুর প্রথম বছরে প্রতিদিন গড়ে যানবাহন চলবে ১৭ হাজারের বেশি।

যে কোনো টানেলে কৃত্রিম অক্সিজেন ও আলো সরবরাহ, সামগ্রিক নিরাপত্তা ও জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কর্ণফুলী টানেলও এর ব্যতিক্রম নয়। সেতু কর্তৃপক্ষের হিসাব মতে, টানেল থেকে টোল বাবদ দৈনিক গড়ে আয় হচ্ছে ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অথচ এই টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক কাজে প্রতিদিন ব্যয় হচ্ছে গড়ে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা; যা আয়ের চেয়ে তিন গুণেরও কম। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু টানেল দেশের জন্য শ্বেতহস্তিতে পরিণত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল চট্টগ্রামকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসেবে গড়ে তোলা। টালে দিয়ে বাইসাইকেল, সিএনজি ও মোটরসাইকেলের মতো ‘লোকাল ট্রাফিক’ পারাপার করতে দেওয়া হচ্ছে না। আবার টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে এখনও তেমন কোনো শিল্পকারখানাই হয়নি। ফলে যান চলাচল বাড়ছে না। তাছাড়া পরিকল্পনাধীন পতেঙ্গা টার্মিনাল হয়নি, বে টার্মিনাল হয়নি, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল হয়নি। যতদিন এসব অবকাঠামো না হবে, ততদিনে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প থেকে কোনো সুফল পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

‘টানেল নির্মাণ কতটা দূরদর্শী সিদ্ধান্ত’ এই শিরোনামে সম্প্রতি একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক। গবেষণাপত্রে অদূরদর্শী পরিকল্পনা ও টানেলটির বিভিন্ন দুর্বলতা তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, কর্ণফুলী টানেলের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে শাহ আমানত সেতু। এ সেতুর তুলনায় কর্ণফুলী টানেলের টোল হার যানবাহন ভেদে আড়াই থেকে ছয় গুণ পর্যন্ত বেশি। টোল হারের এ পার্থক্য টানেলে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

ড. সামছুল হক জানিয়েছেন, টানেল নির্মাণের আগে যে সমীক্ষা করা হয়েছিল, তাতে যানবাহন চলাচলের যে ধারণা করা হয়েছিল তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে এটি একটি ফরমায়েশি প্রকল্প। সমীক্ষা অনুযায়ী সহসা এই টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে না, এটা সহজে অনুমান করা যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যানবাহন চলাচলের জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর অনুমোদিত হেড রুম হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ মিটার। সড়কের ওপর কোনো ফ্লাইওভার বা সমজাতীয় অবকাঠামো করলে যানবাহন নির্বিঘ্নে পারাপারের জন্য সেটির উচ্চতাও এ মানদণ্ড অনুযায়ী করা হয়। অথচ কর্ণফুলী টানেলে হেডরুম রাখা হয়েছে ৪ দশমিক ৯ মিটার। উচ্চতা কম হওয়ায় টানেল দিয়ে ভারী কার্গোর মতো যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। আবার নিরাপত্তাজনিত কারণে দাহ্য পদার্থসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ থাকারও বিরূপ প্রভাব পড়ছে।  কর্ণফুলী নদীতে টানেলের বদলে ধনুকাকৃতির (আর্চ) লম্বা স্প্যান, সাসপেনশন ও কেবল দিয়ে ঝুলন্ত সেতু তৈরি করে কম খরচে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই একটি অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব ছিল।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান জানান, বঙ্গবন্ধু টানেল করা হয়েছে মিরসরাই ও মাতারবাড়ীর মতো অর্থনৈতিক করিডরগুলো মাথায় রেখে। এগুলো যদি সঠিক সময়ে চালু করা না যায়, তাহলে এ বিনিয়োগ মুখ থুবড়ে পড়বে; এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে এ টানেলের মূল দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এটি দেশের নদীর তলদেশের প্রথম টানেল। ২০১৭ সালে কর্ণফুলী টানেল চালু হবে ধরে নিয়ে সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় যান চলাচলের প্রাক্কলন করা হয়েছিল। প্রাক্কলন অনুযায়ী, চালুর পর ২০১৭ সালে দৈনিক গড়ে ১৭ হাজার ৩৭৪টি যানবাহন চলবে। ২০২০ সালে এ সংখ্যা বেড়ে হবে ২০ হাজার ৭১৯। ২০২৫ সালে হবে ২৮ হাজার ৩০৫।  

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_05/p1kq0rsou/public_html/details.php on line 531