ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Advertisement
Advertisement

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অস্থিরতায় ভারতের কী লাভ হচ্ছে

প্রকাশিত: ২৩:৪৪, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১৩:৪৭, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অস্থিরতায় ভারতের কী লাভ হচ্ছে

পোশাক কারখানা

বাংলাদেশ এখনো তার প্রতিযোগীদের তুলনায় বড় সুবিধা ভোগ করছে। শ্রমিকদের মজুরি এখনো অন্য যেকোনো জায়গার চেয়ে কম। এমনকি ইউরোপীয় বাজারে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার ভোগ করছে।

এ বস্ত্রশিল্পের হাত ধরেই এশিয়া মহাদেশের উত্থান। বিশ্ববাজারের জন্য টি-শার্ট ও ট্রাউজার উৎপাদন করে এ মহাদেশের মানুষ কৃষক থেকে হয়ে গেছে বস্ত্রশ্রমিক। এ প্রক্রিয়ার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হতে পারে বাংলাদেশ।

১৯৭৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রথম রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা তৈরি করে বাংলাদেশ। এরপর থেকে পোশাক রপ্তানিতে দেশটির অর্থনীতি একটি শক্তিশালী অবস্থানে এসেছে। এ খাতে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ কাজ করে, এবং তাদের বেশিরভাগই নারী। দেশের মোট জিডিপির ১০ শতাংশ আসে এ খাত থেকে। গত বছর বাংলাদেশ ৫৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। বিশ্বে চীনের পরই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে এ খাত ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে হওয়া বিক্ষোভে মাসব্যাপী চলে কঠোর দমন-পীড়ন। এর মধ্যেই জারি করা হয়েছিল কারফিউ, যার কারণে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়। বিক্ষোভের ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন হলেও দেশের অস্থিরতা কমেনি।

নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রতিদিন অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। তেমনি পোশাক শ্রমিকেরাও নিজেদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন। তাছাড়া বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও গ্যাসের সংকটের কারণে কারখানাগুলোতে এখনো অস্থিরতা বিরাজ করছে, যার ফলে এগুলো সক্ষমতার চাইতে কম পোশাক উৎপাদন করতে পারছে। সামগ্রিকভাবে এ বছর পোশাক রপ্তানি ১০ থেকে ২০ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে।

অন্যান্য দেশ এ পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার জন্য বসে আছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তুলা উৎপাদনকারী দেশ হয়ে বাংলাদেশে তুলা রপ্তানি করেও ভারত বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে। ২০২৩ সালে ভারত বাংলাদেশের তুলনায় মাত্র এক-চতুর্থাংশ পরিমাণ পোশাক রপ্তানি করতে পেরেছে।

বস্ত্রশিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের তিরুপ্পুরের এক রপ্তানিকারক জানিয়েছেন, বাংলাদেশে অস্থিরতার কারণে তারা ৫৪ মিলিয়ন ডলারের নতুন কার্যাদেশ পেয়েছেন। দিল্লির বাইরে আরেক রপ্তানিকারক জানিয়েছেন, তারা গত আগস্ট মাসে স্প্যানিশ ফ্যাশন কোম্পানি জারা থেকে ১৫ শতাংশ বেশি কার্যাদেশ পেয়েছেন।

তবে বাংলাদেশকে এ বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করা কঠিন হবে। ঢাকার এক শিল্প বিশ্লেষক মেহেদী মাহবুব বলেন, "বর্তমান অস্থিরতা স্বল্পমেয়াদি। কারখানাগুলো ইতোমধ্যেই আবার চালু হয়েছে এবং পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে।" তাছাড়া, বাংলাদেশ এখনো তার প্রতিযোগীদের তুলনায় বড় সুবিধা ভোগ করছে। শ্রমিকদের মজুরি এখনো অন্য যেকোনো জায়গার চেয়ে কম। এমনকি ইউরোপীয় বাজারে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার ভোগ করছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, বস্ত্র উৎপাদনের দীর্ঘ ইতিহাস থাকার কারণে দেশটি বড় অর্ডার সামলাতে দক্ষ। গ্যাপের সাপ্লাই চেইন প্রধান জানান, আমেরিকান ফ্যাশন ব্র্যান্ড বাংলাদেশকে নিয়ে "সতর্ক কিন্তু আশাবাদী"।

একজন শিল্প বিশেষজ্ঞের মতে, এ মুহূর্তে ভারতের পক্ষে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা নেই। তিনি বলেন, রাজনীতির অধিকাংশ মনোযোগই এখন পুঁজিনির্ভর খাত, যেমন বৈদ্যুতিক পণ্যের সম্প্রসারণের দিকে, শ্রমনির্ভর বস্ত্রশিল্পের দিকে নয়। ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ভারতীয় পোশাক রপ্তানির মূল্য ১৫ শতাংশ কমেছে, যেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি ৬৩ শতাংশ বেড়েছে। এর জন্য বিশ্বব্যাংক তাদের একটি প্রতিবেদনে ভারতের সুরক্ষাবাদী নীতিগুলোকেই দায়ী করেছে। ২০১৭ সাল থেকে বস্ত্র ও পোশাকের ওপর গড় আমদানি শুল্ক ১৩ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে, যার ফলে উৎপাদকদের জন্য দাম বেড়ে গেছে।

তবে চীনের কম মূল্যের পোশাক উৎপাদন ব্যবস্থার পতন হলে ভারতের জন্য একটি বড় সুযোগ আসতে পারে। কিন্তু এ খাতে বাংলাদেশ থাকায় ভারতকে এখানেও প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে।

বিশ্বব্যাংকের গবেষণা অনুসারে, চীনের নিম্নমানের পোশাক রপ্তানি কমে গেলে এর সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হবে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম। এদিকে, কর্মসংস্থানের মানও গুরুত্বপূর্ণ। উন্নতির জন্য বস্ত্রশিল্পের মূল্য সংযোজন শৃঙ্খলাকে উন্নত করতে হবে। বাংলাদেশ ও ভারত উভয় রাষ্ট্রই আগামীতে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। এর জন্য বস্ত্রশিল্পকে আরও বহুমুখী ও সামগ্রিকভাবে অর্থকরী হতে হবে।

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_05/p1kq0rsou/public_html/details.php on line 531