Deprecated: str_replace(): Passing null to parameter #3 ($subject) of type array|string is deprecated in /mnt/volume_sgp1_05/dikdorshon/public_html/common/config.php on line 154
টিএসসিতে প্রিয়া খানের দোকানে শিক্ষার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে!

ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

Advertisement
Advertisement

চা বেচে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা

টিএসসিতে প্রিয়া খানের দোকানে শিক্ষার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে!

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৩:৪৬, ১২ অক্টোবর ২০২৪

টিএসসিতে প্রিয়া খানের দোকানে শিক্ষার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে!

প্রিয়া খান যে একাই স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন, তা নয়। তার দোকানে তৃতীয় লিঙ্গের আরেকটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। তার নাম নদী। তিনিও ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরে টাকা তুলেছেন। প্রিয়া খানের দোকানে সাকিব নামের আরেকজন কর্মচারী রয়েছেন।

প্রিয়া খান। পেশায় চা দোকানি। তিনি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি প্রিয়া আপা নামেই বেশি পরিচিত। তার দোকানটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মোড়ে। এ দোকান করেই স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।

চায়ের দোকান শুরুর আগে প্রিয়া খান দীর্ঘদিন শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা তুলে জীবনযাপন করতেন। তবে এখন তাকে কারো কাছে হাত পাততে হয় না। এক সময় যাদের কাছে চেয়েচিন্তে জীবনযাপন করতেন, এখন তাদেরই নিজ হাতে চা বানিয়ে খাওয়াচ্ছেন তিনি।

প্রিয়া খানের দোকানটিতে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে, যেন এক মুহূর্তও বসে থাকার ফুরসত নেই তার। রং চা, দুধ চায়েই পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের চা রয়েছে তার দোকানে। যেমন- লেবু চা, মাল্টা চা, মালটোভা চা, কফি চা, মসলা চা, তেঁতুল চা। এছাড়াও কেক, বিস্কুট, পাউরুটি ও কলাও বিক্রি করেন তিনি।

প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দোকান করেন প্রিয়া। দোকানে আসা শিক্ষার্থীদের চা খাওয়ানোর পাশাপাশি তাদের সঙ্গে গল্প-আড্ডায়ও অংশ নেন তিনি।

প্রিয়া খানের এ পথচলা মোটেও সহজ ছিল না। তার জন্ম সাভারে হলেও বড় হয়েছেন টাঙ্গাইলে। তার লৈঙ্গিক পরিচয় নতুন করে জানার পর তার পরিবার তাকে মেনে নিয়েছিল। তবে আশে-পাশের মানুষের কথা ও সামাজিক চাপের মুখে তিনি বাড়ি ছাড়েন। এরপর নিজের গুরুমায়ের (হিজড়া সম্প্রদায়ের নেত্রী) সঙ্গে সাথে ঢাকা চলে আসেন।

ঢাকায় আসার পর পুরান ঢাকায় দীর্ঘদিন নাচ-গান করেই জীবন কাটছিল তার। বয়স হওয়ার পর এ পেশা ছেড়ে টাকা তোলার কাজ শুরু করেন শাহবাগ এলাকায়। দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় টাকা তুলেছেন তিনি।  

প্রিয়া খান বলেন, 'আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন মানুষ নই। গত ২৪ বছর আমি এখানে শিক্ষার্থী ভাই-বোনদের কাছ থেকে  টাকা তুলেছি। কখনো কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করি নাই বা বিরক্ত করি নাই। এই ক্যাম্পাস আমার অনেক আপন।'

তিনি বলেন, শাহবাগ এলাকায় আমার হিজড়া দল টাকা তুলে। থানায় জিজ্ঞাসা করে দেখেন, কেউ কোনোদিন বলতে পারবে না যে আমার হিজড়াদের নামে কোনো অভিযোগ গিয়েছে। আমি ২০১৬ সাল থেকে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছিলাম। ভাবছিলাম এভাবে মানুষের কাছে হাত না পেতে নিজেই কিছু একটা করব। পরে কয়েকজনের সহায়তায় আমি এই চায়ের দোকান দিতে পেরেছি। প্রশাসন ও ক্যাম্পাসের মানুষদের কাছে আমি আজীবন ঋণী।'

প্রিয়া খান যে একাই স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন, তা নয়। তার দোকানে তৃতীয় লিঙ্গের আরেকটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। তার নাম নদী। তিনিও ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরে টাকা তুলেছেন। প্রিয়া খানের দোকানে সাকিব নামের আরেকজন কর্মচারী রয়েছেন।

প্রিয়া খানের সাথে কথা বলতে বলতেই একদল শিক্ষার্থী এসে হাজির। তাদের মধ্যে একজন বলে উঠলেন, 'প্রিয়া আপা! আপনি নিজ হাতে চা বানিয়ে দেন তো আমাদের'। ঠিক যেন বড় বোনের কাছে ছোট ভাই আবদার করছে। এরপর তাদের বসতে বলে চায়ের কাপ আর কেটলিতে হাত দিলেন প্রিয়া খান।

প্রিয়া খানের চায়ে দোকান নিয়ে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আদনান তূর্যের সঙ্গে। বললেন, 'প্রিয়া আপা আমাদের পরিচিত মুখ। ক্যাম্পাসে যখন প্রথম আসি, তখনই টিএসসিতে দেখা হয় উনার সঙ্গে। টাকা তুলছিলেন সবার থেকে, আমার কাছেও এসেছিলেন। এরপর বেশ কয়েকবার টাকার জন্য এসেছিলেন তিনি।  আজকে আমরা সবাই প্রিয়া আপার হাতে চা খাচ্ছি!'

তিনি আরও বলেন, 'প্রিয়া আপার এই যাত্রা আমরা নিজের চোখে দেখলাম। খুব ভালো লাগে বিষয়টা। যেই নতুন বাংলাদেশের জন্য আমরা লড়াই করলাম, সেই বাংলাদেশ হবে অনন্য, এমনটাই স্বপ্ন দেখি। সব লৈঙ্গিক পরিচয়ের মানুষ সমাজে সম্মান নিয়ে বাঁচবে, সবাই নিজেদের মতো কর্মসংস্থান করে দিনাতিপাত করবে, এটাই চাওয়া।'

প্রিয়া খান জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। জুলাই মাসের ১৬ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার নেতৃত্বেই হিজড়া সম্প্রদায়ের একদল স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেছেন। আন্দোলনে আহতদের সেবায় কাজ করেছেন তারা। নিহতদের মরদেহ আনা-নেওয়ার কাজে করেছেন সহায়তা।

প্রিয়া খানের প্রচেষ্টায় ৩৬ জন হিজড়া রক্তদান করেছেন আহতদের জন্য। এছাড়াও জোগাড় করে দিয়েছেন ৭৩০ ব্যাগ রক্ত। এমনকি হাসপাতালে আনা আহতদের চিকিৎসায় তিন লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছেন তারা। এসব কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন বাধার শিকারও হয়েছেন। এর পরও তারা পিছপা হননি।

জুলাই বিপ্লবের নেপথ্যের অনেক নায়ক সামনে এসেছে। কিন্তু পেছনে রয়ে গেছেন প্রিয়া খানের মতো অবহেলিত মানুষেরা। তারা কোনো কৃতিত্ত্বের দাবি করেন না। প্রিয়া খানের মতো যারা স্বাবলম্বী হতে চান, তাদেরও যেন সুযোগ দেওয়া হয়, এটাই তার প্রত্যাশা।

প্রিয়া খান স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা সাধারণ মানুষদের মতো সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তিনি দেশের হিজড়া জনগোষ্ঠীকে অচ্ছুৎ করে রাখার মানসিকতা দূর হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তিনি এমন এক বাংলাদেশ চান যেখানে তৃতীয় লিঙ্গের কাউকে কারো কাছে হাত পাততে হবে না, তাদের সবাই হবে স্বাবলম্বী।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট দেশের শাসনক্ষমতার পালাবদলের পর সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে বহিরাগত মুক্ত করার ঘোষণা দেয় প্রশাসন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে টিএসসির চায়ের দোকানগুলো উচ্ছেদের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তবে এতে একদল শিক্ষার্থী বাধা দেন। পরে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০০৮ সালের আগে থেকে টিএসসিতে যাদের দোকান ছিল, তাদের নিবন্ধিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেইসঙ্গে প্রিয়া খানকে টিএসসিতে দোকান করার অনুমোদন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

Advertisement
Advertisement

Warning: Undefined variable $sAddThis in /mnt/volume_sgp1_05/dikdorshon/public_html/details.php on line 531