Deprecated: str_replace(): Passing null to parameter #3 ($subject) of type array|string is deprecated in /mnt/volume_sgp1_05/dikdorshon/public_html/common/config.php on line 154
হাত চলে গেছে, তাতে কি! এখনও জীবন আছে, দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি

ঢাকা,  শুক্রবার
১৮ অক্টোবর ২০২৪

Advertisement
Advertisement

জুলাই বিদ্রোহে বেঁচে যাওয়া আতিকুল

হাত চলে গেছে, তাতে কি! এখনও জীবন আছে, দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২১:৩৫, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

হাত চলে গেছে, তাতে কি! এখনও জীবন আছে, দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি

সেসময়ের ‘উত্তরা যুদ্ধক্ষেত্রের’ স্মৃতি আরজে আতিকুল গাজীকে এখনও তাড়া করে। তিনি বলেন, “টিকটকে নিজের অনুভূতি প্রকাশ ও অন্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তিনি এ নতুন জীবন শুরু করতে পেরেছেন এবং সুস্থতার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন।”

এ বছর ১৬ সেপ্টেম্বর আরজে আতিকুল গাজী নামে এক তরুণ টিকটকে আত্মপ্রকাশ করেন। তার একটি হাত না থাকা সত্ত্বেও তিনি সবসময় প্রফুল্ল থাকেন। জীবনের প্রতি তার ইতিবাচক মনোভাব এবং গালে টোল পড়া হাসি সোশ্যাল মিডিয়া অনুসারীদের মন জয় করে নিয়েছে।

তার প্রথম করা টিকটক পোস্টে তিনি বলেন, "আমি আবেক নয়, বিবেক দিয়ে বলছি। আপনারা কি ভাবছেন, ভয় পেয়ে গেছি? না.. না.. আমি ভয় পাওয়ার ছেলে না। আমাদের ডাক দিয়ে দেখেন, আমরা আবারও মাঠে আছি। হয়ত এক হাত চলে গেছে, তাতে কি! এখনও জীবন আছে, দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। ধন্যবাদ।"

আতিকুল এ পর্যন্ত ডজনখানেক ভিডিও আপলোড করেছেন। এসব ভিডিওগুলোতে শত শত বাংলাদেশি মন্তব্য করেছেন। জুলাইয়ে বিদ্রোহে তার আত্মত্যাগের জন্য তার বেশিরভাগ অনুসারীরা তার প্রশংসা করেন। তাদের একজন লিখেছেন, "তুমি আমাদের জুলাইয়ের বিপ্লবের কথা মনে করিয়ে দাও।"

তাদের পাশাপাশি এমন কিছু ব্যক্তিরও মন্তব্য আছে যারা এখনও স্বৈরাচারী শাসকদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তাদের একজন মন্তব্য করেন, "তুমি যখন আবেগকে ছেড়ে বাস্তবতায় ফিরে আসবে, তখন সব বুঝতে পারবে।" অনেকে আবার তাকে সতর্ক করে বলেছেন যে তাকে হয়ত বাঁচার জন্য ভিক্ষা করতে হতে পারে।

সর্বশেষ ভিডিওতে আতিকুল গাজী বলেন, ভাই, খারাপ মন্তব্য করার কোনো মানে হয় না। যারা ভিক্ষার কথা বলেন, ইনশাআল্লাহ, একদিন আমি আপনাদের ভিক্ষা দিব।"

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উত্তরায় পুলিশের গুলিতে অসংখ্য মানুষের প্রাণ যেতে দেখেছেন আতিকুল। স্বৈরাচারী শাসকের পোষা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে একটি হাতও হারাতে হয়েছে আতিকুলকে। এতো মৃত্যু, নিজের হাত হারানো এবং স্বৈরাচারের পতনে মধ্য দিয়ে তিনি যেন জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করেছেন।

সেসময়ের 'উত্তরা যুদ্ধক্ষেত্রের' স্মৃতি তাকে এখনও তাড়া করে। তিনি বলেন, "টিকটকে নিজের অনুভূতি প্রকাশ ও অন্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তিনি এ নতুন জীবন শুরু করতে পেরেছেন এবং সুস্থতার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন।"

আতিকুলের সঙ্গে সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল?

সেদিন ছিল ৫ আগস্ট। আন্দোলনাকারীদের মতে সেদিন ছিল ৩৬ জুলাই।

সেদিন উত্তরায় একজন মানুষকে গুলি করা হয়। গুলিটি তার মাথার খুলির ভেতরে ঢুকে যায়। আতিকুল তাকে সাহায্য করতে ছুটে যান। তার সঙ্গে থাকা এক সঙ্গী তাকে বলেন, "তাকে বাঁচানোর কোনো উপায় ছিল না। তবুও আতিকুল অনড় ছিলেন। তিনি মনে করছিলেন, ডাক্তাররা হয়ত তাকে বাঁচাতে পারবে। আতিকুল সেই গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে একটি রিকশায় তুলে দেন এবং নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে রিকশাচালককে নির্দেশ দেন।

সেদিন যদিও শেখ হাসিনা তখন ভারতে পালিয়ে গেছেন। কিন্তু তার অনুগত পুলিশ বাহিনী আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো অব্যাহত রাখেন। সেসময়ের কথা স্মরণ করে আতিকুল বলেন, "আমি তাদের কাছে প্রার্থনা করেছিলাম যেন আমাদের গুলি না করে। আমি বলেছিলাম, আমাদের লড়াই আপনাদের সঙ্গে না। কিন্তু তারা শুনেনি।"

এর মধ্যে কিছুক্ষণের মধ্যেই আরেকজনকে গুলি করা হয়। তাকে বাঁচাতে আতিকুল ছুটে যান। কিন্তু এসময় তার একটি হাতেও গুলি লাগে।

সেদিন হাজার হাজার আন্দোলনকারী ঢাকার রাস্তায় নেমে আসায় কোনো যানবাহন পাওয়া যায়নি। তবুও তার সঙ্গীরা উত্তরার একটি স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায় আতিকুলকে। সেখানে ডাক্তাররা তার গুলি সরিয়ে দেন। কিন্তু হাতটি বাঁচাতে দ্রুত জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটে (এনআইসিভিডি) নিয়ে যেতে বলেন তারা। তারা বলেছিলেন, "হাত বাঁচাতে আট ঘণ্টার মধ্যে কিছু করতে হবে।"

তবে আতিকুল অভিযোগ করেন, এনআইসিভিডি'র ডাক্তাররা তার চিকিৎসায় অবহেলা করেছেন এবং একদিন সময় নষ্ট করে তাকে ঢাকার জাতীয় ট্রমাটোলজি এবং অর্থোপেডিক পুনর্বাসন ইনস্টিটিউটে (এনআইটিওআর) পাঠানো হয়। কিন্তু তার হাতটি বাঁচানোর জন্য ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। তার জীবন বাঁচাতে তাই তার হাতটি কেটে ফেলা হয়।

বাংলাদেশে যখন জুলাইয়ের শহীদদের রক্তে ভিজ নতুন পাওয়া স্বাধীনতায় ডুবে যাচ্ছিল, তখন আতিকুল তার সাহসী অবস্থানের বড় মূল্য দিচ্ছিলেন।

আতিকুল বলেন, "যখন আমার হাতটি কাটার জন্য মেশিন চালু করলো, আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন আমাকে হারিয়ে ফেলছি। আমি বুঝতে পারছিলাম আমি চিরদিনের জন্য বিকল হয়ে যাচ্ছি।"

জীবনের আরেকটি লড়াইয়ে প্রস্তুত হাস্যোজ্জ্বল আতিকুল

বাংলাদেশের জুলাইয়ের বিপ্লবে কোনো এক নায়কের গল্প ছিল না। এটি ছিল গণঅভ্যুত্থান। সেদিন সমাজের সব শ্রেণি পেশার মানুষ শেখ হাসিনার নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল। আতিকুল সেই অনেক বীর ও বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের একজন।

তবে তিনি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তার হাসিমাখা ছবি থেকে। সেই ছবিটি ভাইরাল হয়েছিল। সেই ভাইরাল ছবিতে তিনি লিখেছিলেন, প্রয়োজন হলে তিনি আবারও দেশের জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত। দেশের জন্য তার বাকি হাত ও জীবনও উৎসর্গ করতে প্রস্তুত তিনি।

আতিকুল উত্তরার রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্সে সেলসম্যান হিসেবে কাজ করতেন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট তিনি। দারিদ্র্যের কারণে দশম শ্রেণির পর তিনি আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি।

যদিও তার বাবা এখন উত্তরায় একটি ছোটখাট ফার্নিচারের শোরুমের মালিক, তারপরও তার ভাইবোনেরা এখনো দিনমজুরের কাজ করেন।

আতিকুল বলেন, "আমি যখন দেখলাম আমার সমবয়সি ছাত্র ও ভাইরা আন্দোলনে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে, আমি ঘরে নিরাপদে আর বসে থাকতে পারিনি। আমি আমার মা-বাবা ও নিয়োগকর্তার কাছ থেকে লুকিয়ে ১৮ জুলাই থেকে উত্তরার সব আন্দোলনে যেতে শুরু করি।"

তিনি জানান, ৫ আগস্টের আগেই তিনি বহুবার আহত হয়েছেন। কিন্তু কিছুই তাকে আটকাতে পারেনি। তিনি প্রতিবেদকদের তার শরীরে সেই রাবার বুলেটের দাগ দেখান।

আতিকুল এখনও পুরোপুরি সেরে উঠেননি। তবে তিনি চলাফেরা করতে পারেন এবং মানুষের সঙ্গে দেখা করতে ও টিকটক ভিডিও বানাতে পারেন।

তিনি বলেন, "আমি আগে টিকটক ঘুণা করতাম। কিন্তু হাত হারানোর পর এবং বাংলাদেশের মুক্তিতে ভূমিকা রাখার পর আমি এ মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার সিদ্ধান্ত নেই।"

তিনি বলেন, "আমি চাই মানুষ আমাদের মনে রাখুক। আমরা কে বা আমরা কী করেছি, মানুষ যেন আমাদের ভুলে না যায়। আমরা কীসের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি, কী অর্জন করেছি এবং কীসের বিনিময়ে এসব পেয়েছি, তার স্মারক হয়ে থাকবো আমি।"

Advertisement
Advertisement

Warning: Undefined variable $sAddThis in /mnt/volume_sgp1_05/dikdorshon/public_html/details.php on line 531