Deprecated: str_replace(): Passing null to parameter #3 ($subject) of type array|string is deprecated in /mnt/volume_sgp1_05/dikdorshon/public_html/common/config.php on line 154
রাজধানীজুড়ে জমজমাট হচ্ছে লাইভ বেকারি ব্যবসা!

ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
২১ নভেম্বর ২০২৪

Advertisement
Advertisement

রাজধানীজুড়ে জমজমাট হচ্ছে ’লাইভ বেকারি’ ব্যবসা!

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৯:০৮, ২৫ অক্টোবর ২০২৪

রাজধানীজুড়ে জমজমাট হচ্ছে ’লাইভ বেকারি’ ব্যবসা!

লাইভ বেকারির এ ট্রেন্ডটি ঢাকার খাদ্য সংস্কৃতিতে একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। এটি শুধু খাবারের গুণগত মান এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করছে না, বরং ক্রেতারা একটি ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতাও পাচ্ছেন।

লাইভ বেকারির এ ট্রেন্ডটি ঢাকার খাদ্য সংস্কৃতিতে একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। এটি শুধু খাবারের গুণগত মান এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করছে না, বরং ক্রেতারা একটি ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতাও পাচ্ছেন।

'এখানেই তৈরি, এখানেই বিক্রি'—নিউ এলিফ্যান্ট রোডের 'হট এন্ড ফ্রেশ লাইভ বেকারি'র এ আকর্ষণীয় ট্যাগলাইনটি পথ চলতে কিংবা রিকশায় বসে আপনার নজরে পড়তে পারে। শুধু তা-ই নয়, লোভনীয় সব খাবারের ঘ্রাণও আকৃষ্ট করতে পারে আপনাকে।

ঢাকার নিউমার্কেটের অদূরের নিউ এলিফ্যান্ট রোড খাবারের ঘ্রাণে মাতিয়ে রেখেছে দুটি লাইভ বেকারি। হট এন্ড ফ্রেশ লাইভ বেকারি তার একটি। আয়তনে বেশ বড় এ বেকারির সামনে ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ার মতো।

এখান থেকে একটু সামনে এগোলেই ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং মল। এর উল্টোদিকে 'আওয়ার ফুড লাইভ বেকারি' নামের আরও একটি বেকারির দেখা মেলে। এটির যাত্রা শুরু হয়েছে মাত্র আট মাস আগে। মানসম্মত খাবার পরিবেশন করে এরই মধ্যে বেকারিটি বেশ সুনাম অর্জন করেছে।

প্রায়ই পথে হেঁটে যেতে যেতে পথচারীরা থেমে যান এখানে। মজাদার সব খাবারের মিষ্টি ঘ্রাণ একরকম টেনে নিয়ে যায় দোকানে। বেকারিতে সদ্য বেক করা গরম গরম খাবার—ঝাল প্যাটিস, কাপ কেক বা বাটার নান খেতে খেতে পরিবারের জন্যও কিনে নেন ক্রেতারা!

ঢাকা নগরীর মানুষের ব্যস্ত জীবনে সাম্প্রতিক সংযোজন হলো এসব লাইভ বেকারি। বছর খানেক আগেও এ ধারণাটি অনেকের কাছে নতুন ছিল। কিন্তু বর্তমানে শহরের অলিগলি, রাস্তার মোড় বা প্রধান সড়কের আশপাশে দেখা মিলছে লাইভ বেকারির।

ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে বেশ। বলতে গেলে ভোজনপ্রেমীদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে এসব স্থান। মোহাম্মদপুর, এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় একটু পরপরই মেলে এ দোকানগুলো। ক্রেতারা কেবল খাবার কিনেন না, বরং খাবার তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটিও দেখেন নিজ চোখে। ফলে মানুষের মধ্যে বাড়ছে বিশ্বাসযোগ্যতা, ঢাকা শহরের লাভজনক ব্যবসার নাম হয়ে উঠেছে 'লাইভ বেকারি'।

লাইভ বেকারি কী?
মূলত লাইভ বেকারি বলতে বোঝায় এমন একটি স্থান, যেখানে ক্রেতারা বেকিংয়ের পুরো প্রক্রিয়াটি সরাসরি দেখতে পান। ব্রেড, কেক, পেস্ট্রি বা অন্যান্য বেকড পণ্যের কাঁচা উপাদান থেকে চূড়ান্ত প্রস্তুত হওয়ার মুহূর্ত পর্যন্ত সবকিছুই তাদের সামনে ঘটে। এটি শুধু ক্রেতাদের চোখের আনন্দই নয়, বরং তাদের মধ্যে নির্দিষ্ট ঐ বেকারির প্রতি আস্থাও তৈরি করে।

কথা হলো এমন এক ক্রেতার যারিন রওনক সচির সঙ্গে। পেশায় তিনি একজন বিজনেস উইম্যান। এছাড়া ফেসবুকে নিজের পেইজ 'স্টোরিজ বাই সচি'-তে বিভিন্ন খাবার নিয়ে লেখালেখি করেন। লাইভ বেকারির খাবার নিয়ে বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন তিনি। জানালেন, এরকম লাইভ বেকারি দেশের বাইরে অহরহ দেখা যায়। ঢাকাতেও এখন নানান জায়গায় এসব বেকারি হচ্ছে।

'আমি পুরান ঢাকা থেকে মোহাম্মদপুর যেতাম বেকারির খাবার খেতে এবং কিনে আনতে। চোখের সামনে খাবার বানাচ্ছে, দেখতেও ভালো লাগে, আবার কোয়ালিটি নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়া যায়। আমার তো [খাবার] বেশ ভালো লাগে,' বলেন তিনি।

'প্রতিদিনেরটা প্রতিদিন'
এ বেকারি পণ্য দিন দিন কেন এত জনপ্রিয় হচ্ছে, সে দিকেও আলোকপাত করলেন আরেক ক্রেতা। কাঁটাবন থেকে 'আওয়ার ফুড লাইভ বেকারি'-তে বাটার বান আর পাউরুটি কিনতে এসেছেন খাইরুল আমীন। তিনি প্রায়ই এখানে আসেন।

সাধারণ দোকানের তুলনায় এখানে দাম বেশি হলেও স্বাদ আর স্বাস্থ্য বিবেচনায় তিনি এখানে আসেন বলে জানালেন। 'দোকানে বাটার বন ১০ বা ১৫ টাকা, এখানে ২৫ টাকা। কিন্তু এটা অনেক টেস্টি, ক্রিমও বেশি থাকে, সাইজেও বড়। আবার সব খাবার অনেক বেশি ফ্রেশ,' বললেন খাইরুল।

বেকারির দোকানিরও একই কথা। তিনি জানালেন, সকাল ৯টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সতেজ খাবার বিক্রি হয়। মানুষের মধ্যে এত জনপ্রিয় হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, 'গরম গরম খাবার পায়, একদম টাটকা, প্রতিদিনেরটা প্রতিদিন। এরপর আবার টেস্টিও। অন্য বেকারির থেকে কোয়ালিটিও ভালো। মানুষ দাঁড়িয়ে থেকে দেখে খাবার কিনে নিয়ে যান।'

এ লাইভ বেকারিতে ১৫ টাকার কাপ কেক থেকে শুরু করে ১০০ টাকার কেক পাওয়া যায়। এছাড়া ২৫ টাকায় বাটার বন, ১০০ টাকায় পাউরুটি, আর ১০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিস্কুটও পাওয়া যায়। প্রায় সব বেকারি পণ্যের দাম এ রকমই। 'একটু সতেজ খাবারের জন্য এটুকু খরচা করাই যায়,' বলে মানেন অনেক ক্রেতা।

দোকান মালিক জানালেন, কেক আর বাটার নানের বিক্রির হার সর্বোচ্চ। তবে অনেক দোকানির মতে, ঝাল প্যাটিস আর পাউরুটিও বেশ বিক্রি হয়।

মূলত এসব খাবারের চাহিদা বাড়ার কারণ হিসেবে বিশ্বাসযোগ্যতা এবং স্বচ্ছতার কথাই বললেন প্রায় সব দোকানি। তাদের মতে, ক্রেতারা সরাসরি খাবার তৈরির প্রক্রিয়া দেখতে পাচ্ছেন, ফলে খাবারের মান এবং স্বাস্থ্যবিধির ওপর আস্থা বাড়ছে। এ সরাসরি অভিজ্ঞতাই ক্রেতাদের মনে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করছে, যা ঐতিহ্যবাহী বেকারির তুলনায় এ লাইভ বেকারিগুলোকে অনন্য করে তুলছে।

আধুনিক মানুষেরা এখন কেবল খাবার কেনার অভিজ্ঞতায় সীমাবদ্ধ থাকতে চান না, বরং সেই প্রক্রিয়ার অংশও হতে চান। লাইভ বেকারিগুলোতে খাবার বানানোর প্রক্রিয়া দেখার সুযোগ থাকায় আনন্দ ও কৌতূহল তৈরি হয়, যা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে।

মানুষের মাঝে এর জনপ্রিয়তা ও বিক্রির পরিমাণ মাথায় রেখে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠছে লাইভ বেকারি। শুধু মোহাম্মদপুর এলাকাতেই ৫–৬টি লাইভ বেকারি আছে। এসব বেকারির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা এ ব্যবসাকে আরও বড় পরিসরে নিতে চান। এমনকি নতুন নতুন ব্যবসায়ীরাও এ তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন।

বাড়ছে বেকারির সংখ্যা
মোহাম্মদপুরের 'লাইভ হট বেকারি'র মালিক আব্দুল খালেক মাত্র দুমাস আগে যুক্ত হয়েছেন এ ব্যবসায়। এরই মধ্যে তার দোকান বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। তাই এখনই পরিসর বাড়ানোর কথা ভাবছেন তিনি। তিনি জানালেন, জনপ্রিয়তার কারণে মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে তার দোকান পর্যন্ত পাঁচটি বেকারি গড়ে উঠেছে, যেগুলো হয়েছে গত এক বছরের মধ্যে।

আব্দুল খালেক বললেন, 'আগে আমি এনজিওতে কাজ করতাম, সেটা বাদ দিয়ে দিয়েছি। এখন এ ব্যবসাই করি। দিনে ১২ থেকে ১৪ হাজার বিক্রি হয়। আগামীতে দোকান বাড়ানোর চিন্তাভাবনা আছে।'

তার বেকারিতে দেখা হলো মোহাম্মদ রওনকের (ছদ্মনাম) সঙ্গে। দোকানে দাঁড়িয়ে খেতে খেতে আব্দুল খালেকের কাছ থেকে নানা পরামর্শ নিচ্ছিলেন। তিনিও নাকি শুরু করতে যাচ্ছেন এ ব্যবসা। বেকারির জায়গা ইতোমধ্যে ঠিক হয়েছে, দোকানের ব্যানারও প্রস্তুত।

অন্যান্য অনেক ব্যবসার মধ্যে এ ব্যবসাটিই কেন শুরু করতে চাচ্ছেন, সে সম্পর্কে রওনক বলেন, 'এটি একটি গোছানো ব্যবসা। একটা রিজনেবল ইনভেস্টমেন্টেই করা যায়। আর ব্যবসার ক্ষেত্রে একটা ব্র্যান্ড দাঁড় করাতে গেলে যে খরচ হয়, সেটা কিন্তু এটাতে লাগছে না। এটা কোনো ব্র্যান্ড না, তবুও মানুষের আস্থা চলে আসছে। কারণ চোখের সামনে হচ্ছে সব। এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার।'

একটি লাইভ বেকারি শুরু করতে কত খরচ হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বললেন, 'আমাদের যে বিশ্লেষণ, তাতে এ ব্যবসা দাঁড় করাতে দোকানের অগ্রিম ভাড়া, সব ধরনের যন্ত্রপাতিসহ সর্বনিম্ন ১০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ লাখের মতো টাকা দরকার। ভালো চাহিদা থাকলে এবং [দোকানের] জায়গা ভালো হলে এটা মোটামুটি লাভজনক ব্যবসা।'

লাইভ বেকারির এ ট্রেন্ডটি ঢাকার খাদ্য সংস্কৃতিতে একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। এটি শুধু খাবারের গুণগত মান এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করছে না, বরং ক্রেতারা একটি ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতাও পাচ্ছেন।

লাইভ বেকারি ধারণাটি শুধু ক্রেতাদের কাছেই নয়, ব্যবসায়ীদের কাছেও একটি সফল উদ্যোগ হিসেবে গড়ে উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যে লাইভ বেকিং সেশন শেয়ার করে আরও বড় পরিসরে তাদের ব্যবসা প্রসারিত করার সুযোগও পাচ্ছেন।

তবে অনেক দোকানি মনে করেন, অতিরিক্ত বেকারি হয়ে গেলে এ ব্যবসায়ও ধস নামতে পারে। 'আওয়ার ফুড লাইভ বেকারি'র মালিক মোহাম্মদ আলামিন বললেন, 'এত বেশি দোকান হয়ে গেলে লাভ করা যাবে না। মিরপুরে অলিতে-গলিতে লাইভ বেকারি। কয়দিন পর এদিকেও হবে। এত বেশি দোকান হয়ে গেলে মান ঠিক থাকবে না।'

Advertisement
Advertisement

Warning: Undefined variable $sAddThis in /mnt/volume_sgp1_05/dikdorshon/public_html/details.php on line 531