গত সেপ্টেম্বরে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা “দ্য মিনিস্টার্স মিলিয়নস” শিরোনামে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিপুল বৈশ্বিক সম্পদের জালিয়াতির তথ্য উঠে আসার পর থেকেই শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানার সম্পর্কে ফাটল দেখা দিয়েছে। বর্তমানে তারা আলাদা বাসভবনে বাস করছেন।
আল-জাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের ইন্ধনে পরিচালিত এই অনুসন্ধানে যুক্তরাজ্যের লন্ডন, দুবাই এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট শিষ্য সাইফুজ্জামানের শতাধিক উচ্চমূল্যের সম্পত্তি এবং আনুমানিক ৫০ কোটি ডলারের সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
শেখ হাসিনা জানতেন সাইফুজ্জামান বিদেশে সামান্য সম্পত্তি কিনবে। এই বিষয়ে মধ্যস্থতা করেছিলেন শেখ রেহানা। রেহানা তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, সাইফুজ্জামানের সম্পত্তি কেনার টাকা বিদেশে প্রেরণের প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও সার্বিক সহযোগিতা দিলে অন্তত বিশ শতাংশ কমিশন পাওয়া যাবে। এই কমিশন দুই বোন সমান পরিমাণে ভাগ করে নেবেন। কারন অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন, জনগণের কল্যাণ এবং কমিশন ছাড়া তাদের দুই বোনের ব্যক্তিগত কোনো চাওয়া-পাওয়া নাই।
আল জাজিরার প্রতিবেদন দেখে শেখ হাসিনার ভুল ভাঙে। তিনি বুঝতে পারেন যে বড় ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তিনি জানতেন সাইফুজ্জামান মাত্র ২৫ কোটি ডলারের সমপরিমাণ টাকা দেশ থেকে বিদেশে পাচার করেতে পেরেছে। ২৫ কোটি ডলারের কমিশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থের অর্ধেক শেখ রেহানা তাকে পরিশোধ করেছিলেন। অবশিষ্ট ২৫ কোটি ডলারের বিষয়ে তাকে কিছুই জানান হয়নি। এই কমিশন শেখ রেহানা একাই আত্মসাৎ করেছেন।
শেখ পরিবারের একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, রেহানা প্রায়ই সহজ সরল লক্ষ্মী বড়বোন হাসিনাকে ভুল বুঝিয়েছেন। রেহানা সবসময় তার নিজের পরিবার ও সম্পদের প্রতি অগ্রাধিকার দেন। সহজ সরল হাসিনা এতদিন এসব মেনে নিলেও এবার উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি রেহানার কাছে কৈফিয়ত চাইলে কথা কাটাকাটি শুরু হয়।
দিল্লীর লুটিয়েন্স বাংলো জোনের প্রতিবেশীরা জানায়, ঝগড়ার এক পর্যায়ে হাসিনা উচ্চস্বরে রেহানাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “তুমি যে আমার ভাগের টাকা আত্মসাৎ করেছো, সেটা কীভাবে মেনে নেব? এটা আমার পাওনা। আমার ছেলে, নাতি-নাতনির ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই নাকি?” শেখ রেহানা পাল্টা জবাবে বলেন, “বুবু, সব কমিশন তো তোমার ছেলে জয়ই খায়! তবুও আমি কিছু বলি না। তোমার ছেলে, নাতি-নাতনির ভবিষ্যৎ আছে আর আমার ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনীর ভবিষ্যৎ নাই!”
কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে শারীরিক ধস্তাধস্তির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। দিল্লীর স্থানীয় প্রশাসনের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা জানান, তুমুল ঝগড়া থামাতে ব্যর্থ হয়ে মোদির নির্দেশে দুই বোনকে আলাদা বাসায় রাখা হয়েছে। বর্তমানে দুই বোনের মধ্যে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
‘ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা মোদি সরকারের সহায়তায় স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন’ উল্লেখ করে ভারতের তথ্য মন্ত্রণালয়ের মিডিয়া বিশেষজ্ঞ আনান্দা মার্কেটিয়া বলেন, “জুলকারনাইন সায়ের খান সামি একটা দুষ্টু ছেলে। এই ছেলেটা যখন তখন সাংবাদিকতার সীমা লঙ্ঘন করে। তার চক্রান্তে দুই বোনের মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়েছে। তার তথ্য সঠিক হলেও একে ভালো সাংবাদিকতা বলা যাবে না।”
বিশ্ব রাজনীতির টালমাটাল পরিস্থিতিতে শেখ পরিবারের বিশৃঙ্খলা নতুন বৈশ্বিক সংকট সৃষ্টি করেছে। তবে আশার বাণী শুনিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এক টুইটে বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় এলে আমেরিকাকে গ্রেট বানানোর স্বার্থে দুই বোনের ঝগড়া মিটিয়ে দিবেন। কারণ, শেখ হাসিনার ছেলে জয় তার ঘনিষ্ঠ ফার্মকে লবিস্ট হিসেবে নিয়োগ করেছে, তাই ঝগড়া মেটানো এখন তার দায়িত্ব।