ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
৩০ জানুয়ারি ২০২৫

Advertisement
Advertisement

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করছে আ. লীগ নেতারা

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ০৯:৩৭, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করছে আ. লীগ নেতারা

শেখ হাসিনা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হসিনার সরকারের পতনের প্রায় পাঁচ মাস পর ভারতে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা বলছেন, বিদেশে বসেই দলকে পুনরুজ্জীবিত করা চেষ্টা করছেন তাঁরা। দেশ থেকে ৩০-৪০ জন সাবেক মন্ত্রী ও এমপি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে এই প্রচেষ্টায় যুক্ত আছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনকে ভালো চোখে দেখছে না বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বলছে, ‘সংঘবদ্ধ অপপ্রচারের অংশ হিসেবে’ এসব প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

এক বিবৃতিতে প্রেস উইং বলেছে, ভারতীয় গণমাধ্যমটি যাদের বক্তব্য প্রকাশ করেছে ‘তাঁরা সবাই সন্দেহভাজন অপরাধী ও গণহত্যায় অভিযুক্ত’। ‘সাংবাদিকতার মৌলিক নিয়ম’ অনুসরণ না করে প্রকাশিত এই প্রতিবেদন ‘মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যে পরিপূর্ণ’।

গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে আ ক ম মোজাম্মেল হক, নাহিম রাজ্জাক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, পঙ্কজ দেবনাথ, সাইফুজ্জামান শিখর, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও মাহবুব-উল আলম হানিফের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে নিজেদের অবস্থা তুলে ধরেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। শাসনপ্রক্রিয়া ও রাজনীতিতে ভুলের কথা স্বীকার করে বাংলাদেশে ফিরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তাঁরা।


আ.লীগ নেতারা বলেন, দলের নেতা-কর্মীরা এখনও ‘ছিন্নভিন্ন ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে’ রয়েছেন। তাদের অনুমান, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের এক তৃতীয়াংশ কারাগারে, এক তৃতীয়াংশ দেশের বাইরে আত্মগোপনে এবং বাকি নেতারা দেশের ভেতরেই লুকিয়ে রয়েছেন।

সাবেক মক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের হাজারো নেতা-কর্মী এখন তাঁদের ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন। তাঁদের অনেকের খাবার কিনে খাওয়ার মতো টাকা নেই... তবুও, তৃণমূল কর্মীদের মনোবল শক্ত আছে।’

বিদেশে আওয়ামী লীগের পক্ষে জনমত গঠনে সাহায্য করার জন্য তাঁরা ভারতের সহায়তা প্রত্যাশা করছেন জানিয়ে মোজাম্মেল বলেন, ‘জ্যেষ্ঠ নেতারা মনে করেন, আমাদের সবার ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়া উচিত।’

আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রায় সবার জামিনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। তাঁর ভাষ্য, দলের নেতারা ‘ভয়াবহ’ পরিস্থিতিতে ‘অসহায়’ অবস্থার মধ্যে আত্মগোপনে থাকছেন।

নাহিম বলেন, ‘আমাদের কোনো বিচারিক অধিকার নেই। কেউ জামিন পাচ্ছেন না। আমরা জানি, দেশে ফিরে নির্বাচনের দাবি জানালে আমাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হবে। আওয়ামী লীগ আলোচনায় বসতে এবং নির্বাচন নিয়ে সংলাপে প্রস্তুত। কিন্তু এর জন্য কোনো পরিবেশ নেই। এখনই আমাদের পক্ষে মাঠে থাকা বা রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়।’

দলকে পুনরুজ্জীবিত করতে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ‘জোরালো আলোচনা’ চলছে বলে জানান দলটির প্রয়াত নেতা আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। নাহিম রাজ্জাক বলেন, এই আলোচনায় দেশ থেকে ৩০-৪০ জন সাবেক মন্ত্রী ও এমপি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে যুক্ত আছেন।

এই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অন্যতম সদস্য বাহাউদ্দিন নাছিম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, আত্মগোপনে থেকেই তিনি বাংলাদেশের প্রায় প্রায় সব জেলার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিদিন নেতাকর্মীদের থেকে ২০০-৩০০টি কল পাই। এভাবেই আওয়ামী লীগের নেতারা কর্মীদের সঙ্গে এবং কর্মীরা জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে, আমরা বিচারের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত থাকব।’

বেশ কয়েকজন নেতা দাবি করেন, ভারতে থাকাকালীনও শেখ হাসিনা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দলের নেতাদের সঙ্গে ‘নিয়মিত’ যোগাযোগ রাখতেন। এরকম কিছু গ্রুপে শেখ হাসিনা ‘আপা’ নামে যুক্ত আছেন।

সাবেক এমপি পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, বাংলাদেশে থাকা নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন শেখ হাসিনা। নিজের সঙ্গেও দলীয় প্রধানের যোগাযোগ থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপা আশাবাদী।’

সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘গত আগস্টে থানা থেকে লুট হওয়া হাজার হাজার অস্ত্র উদ্ধারের কোনো চেষ্টা করা হয়নি। আমাদের সন্দেহ, সমুদ্রপথে আরও অস্ত্র বাংলাদেশে আসছে। পাকিস্তান যেমন ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, তেমনি বাংলাদেশকেও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।’

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘২০২৪ সালের আগস্টের আগেও আওয়ামী লীগ বহু বছর ধরে বিরোধী দলে ছিল। কিন্তু দলটি এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি আগে কখনো হয়নি।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ টেলিফোনে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, তাঁদের দলের তিন লাখের বেশি কর্মী এখন বাংলাদেশে আত্মগোপনে আছেন। এছাড়া বহু নেতা বিদেশে আত্মগোপনে আছেন।

তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের আগের হত্যাকাণ্ডের জন্য শুধু আওয়ামী লীগকে দায়ী করার অন্যায়। শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরেও বাংলাদেশে হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতা হচ্ছে। তাহলে এর জন্য দায়ী কে?’

মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনাকে অভিযুক্ত করা হলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসকেও অভিযুক্ত করা উচিত। শেখ হাসিনা যদি বিচারের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত থাকেন, তাহলে তাঁরও (অধ্যাপক ইউনূস) হওয়া উচিত।’

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531