মো. জাহাঙ্গীর আলম
আগামী মাসে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা বন্ধসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশের বক্তব্যের সুর বা 'টোন' পূর্বের তুলনায় ভিন্ন হবে।
সম্মেলনকে সামনে রেখে আজ বুধবার সচিবালয়ে প্রস্তুতিমূলক আন্তমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব তথ্য জানান।
সম্মেলনের সময় ও আলোচ্য বিষয়
১৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি নয়াদিল্লিতে ৫৫তম বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সংবাদ ব্রিফিংয়ে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সীমান্ত এলাকায় হত্যা একটি গুরুতর সমস্যা। বিএসএফসহ অন্যান্য ভারতীয় নাগরিকদের দ্বারা সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ড অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অনেক সময় দেখা যায়, বিএসএফ ও তাদের দুষ্কৃতকারীরা সীমান্ত থেকে কৃষিকাজ করা অবস্থায় বাংলাদেশি নাগরিকদের ধরে নিয়ে যায়। এই ধরনের কর্মকাণ্ড যেন আর না ঘটে, সে বিষয়ে কঠোরভাবে জানানো হবে।
তিনি আরও বলেন, অনেক সময় সীমান্ত লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে পারাপারের চেষ্টা করা হয়। এই ধরনের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে উভয় দেশকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকের উৎপাদন ও প্রবেশ রোধেও আলোচনা হবে। যদিও ভারত বলে থাকে যে ফেনসিডিল একটি ওষুধ, তবে এটি মাদকের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।
সীমান্ত এলাকার উন্নয়ন ও নিয়মনীতি
সীমান্তবর্তী ১৫০ গজের ভেতরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনার নিয়ম রয়েছে। কিছু কার্যক্রম দুই দেশের অনুমোদন ব্যতীত করা যায় না। কিন্তু ভারতীয় পক্ষ অনেক সময় এই নীতিগুলো লঙ্ঘন করে থাকে। সম্মেলনে এ বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হবে।
ভুয়া সংবাদ ও পানি বণ্টন
ভারতীয় গণমাধ্যম প্রায়শই বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে। এই ধরনের সংবাদ প্রচার কীভাবে বন্ধ করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা হবে। এ ছাড়া নদীর পানির ন্যায্য বণ্টন, বিদ্যমান পানি চুক্তির বাস্তবায়ন এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে পারস্পরিক আস্থার বিষয়েও আলোচনা হবে।
চুক্তি ও অসম সমঝোতা
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চারটি চুক্তি রয়েছে, যার মধ্যে ২০১০ সালের চুক্তিটি বিশেষভাবে আলোচনায় থাকবে। এই চুক্তির কিছু দিক বাংলাদেশের জন্য অসুবিধাজনক বলে মনে করা হচ্ছে। তাই আলোচনায় এসব বিষয় সংশোধনের প্রস্তাব রাখা হবে। ইতিপূর্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ বিষয়ে ভারতকে অবহিত করা হয়েছে।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক উল্লেখ করেন, আগের সম্মেলনগুলোতেও একই ধরনের বিষয় আলোচিত হয়েছে। নতুনত্ব কী?
জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, "নতুনত্ব হলো, এবারের আলোচনার কণ্ঠস্বর ও দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন হবে।"
উক্ত বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) মো. খোদা বখস চৌধুরী, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।