
আলী খামেনেয়ি
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে গাজার মানুষ আমেরিকার বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে। ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের লিডারশিপ কাউন্সিলের প্রধান এবং এর সদস্যরা আজ (শনিবার) সকালে তেহরানে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ খামেনেয়ীর সাথে সাক্ষাত করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠকের শুরুতে হামাসকে নেতৃত্বদানকারী এই পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইল দারবিশ গাজায় প্রতিরোধ সংগ্রামের মহান বিজয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, "আমরা গাজার প্রতিরোধের বিজয়ের সময়ের সাথে ইসলামী বিপ্লবের বিজয় বার্ষিকীর সময়টা মিলে যাওয়াকে একটি শুভ লক্ষণ হিসাবে বিবেচনা করি এবং আমরা আশা করি এই মিল বায়তুল মুকাদ্দাস (জেরুজালেম) এবং আল-আকসা মসজিদের মুক্তির পথ প্রশস্ত করবে।"
এই বৈঠকে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর উপ-প্রধান খলিল আল হায়াও গাজায় প্রতিরোধ সংগ্রামের বিজয়ের জন্য ইসলামী বিপ্লবের নেতাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, "আমরা আজ আপনার সাথে দেখা করতে এসেছি, যখন আমরা সবাই সম্মানিত ও গর্বিত এবং এই মহান বিজয় যেমন আমাদের তেমনি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানেরও।”
এই বৈঠকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী গাজার সব শহীদ বিশেষ করে শহীদ ইসমাইল হানিয়াসহ সব কমান্ডারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে হামাস নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন- সর্বশক্তিমান আল্লাহ প্রতিরোধ সংগ্রাম ও গাজার জনগণকে সম্মান ও বিজয় দান করেছেন এবং গাজাকে সেই মহান আয়াতের উদাহরণ করে তুলেছেন যেখানে বলা হয়েছে, "আল্লাহর ইচ্ছায় কত ক্ষুদ্র দল কত বৃহৎ দলকে পরাভূত করেছে" (সূরা বাকারা, আয়াত ২৪৯)।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা জোর দিয়ে বলেন- আপনারা ইহুদিবাদী ইসরাইলকে ও প্রকৃতপক্ষে আমেরিকাকে পরাজিত করেছেন এবং আল্লাহর রহমতে আপনারা তাদের কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে দেন নি।
দেড় বছরের প্রতিরোধের সময় গাজার জনগণ যে দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেছেন তা উল্লেখ করে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, গাজার জনগণের সব দুঃখ-কষ্ট ও ত্যাগের চূড়ান্ত ফল ছিল মিথ্যার উপর সত্যের বিজয় এবং প্রতিরোধের জন্য নিবেদিতপ্রাণ সবার জন্য গাজার জনগণ আদর্শে পরিণত হয়েছে।
ইসলামী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হামাসের আলোচকদের ধন্যবাদ জানিয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে একটি মহান অর্জন বলে অভিহিত করে বলেন, "বর্তমানে গোটা মুসলিম বিশ্বের এবং প্রতিরোধের সমর্থক সবার দায়িত্ব হলো গাজার জনগণের দুঃখ-কষ্ট ও যন্ত্রণা লাঘবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।”
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী সাংস্কৃতিক কাজের পরিকল্পনা করা এবং সামরিক বিষয়াদি ও গাজার পুনর্গঠনের পাশাপাশি প্রচারের বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখাকে জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, "প্রতিরোধ বাহিনী এবং হামাস প্রচার ও মিডিয়া ক্ষেত্রে চমৎকারভাবে কাজ করেছে, এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে।"
ইসলামী বিপ্লবের নেতা ঈমানকে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ফ্রন্টের প্রধান উপাদান এবং অপ্রচলিত অস্ত্র হিসেবে অভিহিত করে বলেন, "এই ঈমানের কারণেই ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান এবং প্রতিরোধ ফ্রন্ট শত্রুদের বিরুদ্ধে দুর্বলবোধ করে না।"
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের জনগণের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হুমকির কথা উল্লেখ করে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী জোর দিয়ে বলেন, "এই ধরনের হুমকি আমাদের জাতি ও কর্মকর্তাদের মন-মানসিকতার উপর এবং জাতীয় পরিকল্পনা-কর্মতৎপরতা ও তরুণদের উপর কোনও প্রভাব ফেলে না।"
তিনি আরো বলেন, ফিলিস্তিনকে রক্ষা ও ফিলিস্তিনি জনগণকে সমর্থন করার বিষয়ে ইরানি জনগণের মনে কোনো সন্দেহ নেই এবং এই বিষয়টি মীমাংসিত।
ইসলামী বিপ্লবের নেতা বলেন, ফিলিস্তিন সমস্যা আমাদের জন্য একটি প্রধান সমস্যা এবং ফিলিস্তিনের বিজয়ের বিষয়ে আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত।
ফিলিস্তিনি জনগণই চূড়ান্ত ভাবে বিজয় অর্জন করবে- এ কথা উল্লেখ করে সর্বোচ্চ নেতা বলেন, "নানা ঘটনা এবং উত্থান-পতনের কারণে মনের ভেতর সন্দেহ সৃষ্টি হওয়া উচিত নয় বরং ঈমানি শক্তি ও আশা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে ও আল্লাহর সাহায্যের আশা করতে হবে।"
বৈঠকের শেষের দিকে হামাস নেতাদের উদ্দেশ্য করে ইসলামী বিপ্লবের নেতা বলেন, "আল্লাহর রহমতে এমন সময় আসবে যখন আপনারা সবাই পরিপূর্ণ সম্মান ও গর্বের সাথে মুসলিম বিশ্বের জন্য বায়তুল মোকাদ্দাস ইস্যুটির নিষ্পত্তি করবেন এবং সেই দিনটি অবশ্যই আসবে।"
এই বৈঠকে হামাসের নেতৃত্বদানকারী পরিষদ বা শুরা কাউন্সিলের প্রধান মুহাম্মদ ইসমাইল দারবিশ, হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর উপ-প্রধান খলিল আল-হায়া এবং পশ্চিম তীরে হামাসের প্রধান জাহের জাবারিন প্রতিরোধের শহীদবৃন্দ বিশেষ করে ইসমাইল হানিয়া, সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ, ইয়াহিয়া সিনওয়ার এবং সালেহ আল-আরৌরির প্রতি সম্মান জানিয়ে গাজা ও পশ্চিম তীরের সর্বশেষ পরিস্থিতি, অর্জিত বিজয় ও সাফল্য এবং চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন ইরানের সর্বোচ্চ নেতার কাছে উপস্থাপন করেন। একই সঙ্গে তারা ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের জনগণের নিরবচ্ছিন্ন সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।