
শামীমা
অবশেষে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা বেগম। আজ ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়, ফলে শামীমা আইনিভাবে পুরো সময়জুড়ে ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবেই গণ্য হবেন। ইউকে হিউম্যান রাইটস ব্লগ এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সুপ্রিম কোর্টের রায়
"এন ৩ ও জেডএ বনাম যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (২০২৫) ইউকেএসসি-৬" মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে শামীমার নাগরিকত্ব বাতিল করা হলেও সেই আদেশ তাকে রাষ্ট্রহীন করে তুলতে পারে না। আদালত নির্দেশনা দিয়েছে যে, নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশ প্রত্যাহারের ফলে শামীমা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতে ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবেই গণ্য হবেন।
আইএস যোগদান ও নাগরিকত্ব বাতিলের পটভূমি
২০১৫ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে শামীমা ইসলামিক স্টেট (আইএস) গোষ্ঠীতে যোগ দিতে যুক্তরাজ্য ছেড়ে সিরিয়ায় পাড়ি জমান। সেখানে তিনি আইএস সদস্য ডাচ নাগরিক ইয়াগো রিয়েডিকে বিয়ে করেন এবং তাদের তিনটি সন্তান জন্ম নেয়, যারা সবাই মারা গেছে।
২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকি দেখিয়ে শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করেন। যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি ছিল, শামীমা ব্রিটিশ-বাংলাদেশি দ্বৈত নাগরিকত্বধারী, ফলে তার রাষ্ট্রহীন হওয়ার আশঙ্কা নেই। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার জানিয়ে দেয়, শামীমা কখনো বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাননি এবং তাকে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
আইনি লড়াই ও শরণার্থী শিবিরে জীবনযাপন
নাগরিকত্ব ফিরে পেতে ২০২৩ সালে শামীমার আইনজীবীরা আপিল আদালতে আবেদন করেন, যা খারিজ হয়। ২০১৯ সালে আইএস পরাজিত হলে সিরিয়ার আল-রোজ শিবিরে তার সন্ধান পাওয়া যায়, যেখানে তিনি এখনো রয়েছেন।
শামীমার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ওই শিবিরে চরম দারিদ্র্য, অনাহার ও রোগবালাই চলছে। সেখানে শামীমাকে অন্যান্য ব্রিটিশ নারী ও শিশুদের সঙ্গে আটক রাখা হয়েছে, যেখানে তারা অমানবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রতিক্রিয়া
শামীমা স্বীকার করেছেন যে, তিনি জেনেশুনে নিষিদ্ধ সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন এবং এ জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত। তবে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, "আমাদের অগ্রাধিকার দেশের নিরাপত্তা রক্ষা করা। এ ধরনের সিদ্ধান্ত রক্ষার্থে আমরা অটল থাকব।"
শামীমার নাগরিকত্ব পুনরুদ্ধারের ফলে তিনি যুক্তরাজ্যে ফিরতে পারবেন কি না, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে সুপ্রিম কোর্টের রায় তার ভবিষ্যৎ পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।