
কিডনি প্রতিস্থাপন
কিডনি প্রতিস্থাপনের হার বাড়াতে রোগীর আত্মীয়দের মধ্যে কিডনি অদলবদল বা সোয়াপিংয়ের সুযোগ রাখা হবে। পাশাপাশি ব্রেন ডেড রোগীদের কিডনি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্যাডাভেরিক কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
অঙ্গ প্রতিস্থাপনে আইন পরিমার্জন
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বহু রোগী উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান, যার মধ্যে অন্যতম কারণ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সীমিত সুযোগ। এ অবস্থায় দেশে কিডনি প্রতিস্থাপনের হার বাড়াতে অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইন পরিমার্জনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন আইনে ‘কিডনি সোয়াপ’ বা বদলাবদলির সুযোগ রাখা হবে, যাতে আত্মীয়দের মধ্যে টিস্যু বা ব্লাড গ্রুপের অমিল হলেও প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়।
কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন ও বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রতি বছর ৩০-৪০ হাজার রোগীর কিডনি স্থায়ীভাবে বিকল হয়ে যায়। বছরে প্রায় ৫,০০০ রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হলেও দেশে প্রতিস্থাপন হয় মাত্র ৪০০টির মতো।
মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন (সংশোধন) আইন–২০১৮ অনুযায়ী, ২২ ধরনের নিকট আত্মীয় কিডনি দাতা হতে পারেন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই আত্মীয়দের সঙ্গে টিস্যু বা ব্লাড গ্রুপের অমিল থাকায় প্রতিস্থাপন সম্ভব হয় না। নতুন আইনে ডোনার পুল তৈরি করে স্বেচ্ছাসেবী দাতাদের তালিকা সংরক্ষণ করা হবে, যাতে সহজে কিডনি প্রতিস্থাপনের সুযোগ পাওয়া যায়।
অঙ্গ প্রতিস্থাপনে ক্যাডাভেরিক ডোনেশন
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত দুটি ক্যাডাভেরিক কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রথমবারের মতো ব্রেন ডেড রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। ২০২৪ সালেও একইভাবে দুটি কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে।
ব্রেন ডেড রোগীর কিডনি সংরক্ষণ ও ব্যবহারের জন্য সরকার জাতীয় পর্যায়ে ক্যাডাভেরিক ডোনারদের সম্মানিত করার পরিকল্পনা করছে। দাতা ব্যক্তিকে জীবিত থাকাকালীন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা চলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইন পরিমার্জনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, "আমরা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংস্থাপন আইন পরিমার্জন করছি, যেখানে অরগান সোয়াপিং-এর সুযোগ থাকবে। ডোনার পুল তৈরি করে ন্যাশনালি কিডনি প্রতিস্থাপন সহজ করা হবে।"
কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ বলেন, "কিডনি বিকল হলে প্রতিস্থাপনই সবচেয়ে ভালো সমাধান। এটি রোগীকে প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রার সুযোগ দেয়। তবে ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়, খরচ বেশি এবং রোগীকে কষ্ট সহ্য করতে হয়।"
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিডনি প্রতিস্থাপন বাড়াতে আইন সংশোধন, ডোনার পুল তৈরি ও ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
বিশ্ব কিডনি দিবসের বার্তা
আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ব কিডনি দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য: "আপনার কিডনি কি সুস্থ? দ্রুত শনাক্ত করুন, কিডনির সুস্থতা রক্ষা করুন।"
হিউম্যান এইড বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সভাপতি ডা. শেখ মইনুল খোকন বলেন, "দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিলে ৭০ শতাংশ কিডনি রোগ এড়ানো সম্ভব। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।"
সরকারের নতুন উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশে কিডনি প্রতিস্থাপনের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।