ঢাকা,  সোমবার
০৭ এপ্রিল ২০২৫

Advertisement
Advertisement

স্কুলের অস্তিত্ব নেই, নসরুল হামিদের সুপারিশে কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ

প্রকাশিত: ১৪:২০, ১৫ মার্চ ২০২৫

আপডেট: ১৫:৪১, ১৬ মার্চ ২০২৫

স্কুলের অস্তিত্ব নেই, নসরুল হামিদের সুপারিশে কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ

নসরুল হামিদ

ঢাকা জেলা পরিষদের উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় কেরানীগঞ্জ উপজেলার শুভাঢ্যা ইউনিয়নে ‘কৈবর্তপাড়া স্কুল’ নির্মাণের একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয় ২০২২ সালের ২২ জুন। তবে, প্রকল্পের সব ধাপের কাজ শেষ হওয়ার পরও যখন ঠিকাদার অর্থছাড়ের চেক নিতে যান, তখন একজন কর্মকর্তার সন্দেহ হয়। পরবর্তী তদন্তে উঠে আসে, এই স্কুলের কোনো অস্তিত্বই নেই।

প্রকল্পের অনিয়ম ও এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া

কৈবর্তপাড়ায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত স্থানে কোনো স্কুল নেই। মাঠের দক্ষিণে একটি ইটের দেয়াল এবং পূর্বে একটি টিনশেড ঘর থাকলেও এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, এখানে কখনোই কোনো সরকারি স্কুল নির্মাণ হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রউফ জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একবার দেয়াল নির্মাণের কাজ হলেও এরপর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। বিএনপির আমলেও একবার স্কুল নির্মাণের চেষ্টা হয়েছিল, তবে সেটিও ব্যর্থ হয়।

স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব বাসিন্দা জামাল উদ্দিনের ভাষ্য, কয়েক বছর আগে আওয়ামী লীগের নেতাদের এখানে যাতায়াত করতে দেখা যেত। পরবর্তীতে টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারার অভিযোগও এলাকাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

অবৈধভাবে অর্থ বরাদ্দ ও ঠিকাদারের বক্তব্য

ঢাকা জেলা পরিষদ ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্কুলটির জন্য ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আরও ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। মোট ১ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছিল এই প্রকল্প। তবে, তদন্তে দেখা যায়, এই অর্থের সদ্ব্যবহার হয়নি।

প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা মেসার্স আওয়াল ট্রেডার্স নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোহাম্মদ আওয়াল জানান, প্রকল্পের কার্যাদেশ পাওয়ার পর স্থানীয় একজন তার লাইসেন্সের অধীনে কাজটি নেন। তিনি জানান, ‘একটা বাউন্ডারি তৈরি হয়েছে কি না, সে বিষয়ে আমি অবগত নই এবং বিলের জন্যও কোনো আবেদন করিনি।’

তদন্ত ও প্রশাসনের পদক্ষেপ

কেরানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিনাত ফৌজিয়া তদন্ত করে জানান, কৈবর্তপাড়ায় কোনো সরকারি স্কুলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সরকারি অর্থ আত্মসাতের জন্যই এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল বলে তার তদন্তে উঠে আসে।

এ ঘটনায় ঢাকা জেলা পরিষদ তিনজন কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়— সাবেক সহকারী প্রকৌশলী আবদুস ছামাদ পত্তনদার, সাবেক উপসহকারী প্রকৌশলী মো. খলিলুর রহমান ও ফজলুল হক। তবে, তারা নিজেদের দোষ স্বীকার না করে দায় অন্যের ওপর চাপিয়ে দেন।

টিআইবি’র প্রতিক্রিয়া ও সুপারিশ

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এই ঘটনাকে ‘বহুমাত্রিক দুর্নীতি’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘এই প্রকল্পের মূল দায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের, যিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি কাল্পনিক স্কুলের জন্য অর্থ বরাদ্দ করিয়েছিলেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুর্নীতির এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।’

ঢাকা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসাইন জানান, ‘এই প্রকল্পে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কৈবর্তপাড়া স্কুল নির্মাণ প্রকল্পটি সরকারি অর্থ আত্মসাতের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। রাজনৈতিক সুপারিশের মাধ্যমে কিভাবে ভুয়া প্রকল্পের অনুমোদন নিয়ে জনগণের করের টাকা লোপাট করা হয়, এটি তারই প্রতিফলন। এ ধরনের দুর্নীতি বন্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাই একমাত্র সমাধান।

 

Advertisement
Advertisement

আরো পড়ুন  


Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531