ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
১০ এপ্রিল ২০২৫

Advertisement
Advertisement

দিনাজপুরে লিচুবাগানে মিলল ২০০ বাক্স ভর্তি মৃত মৌমাছি

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৭:২২, ৬ এপ্রিল ২০২৫

দিনাজপুরে লিচুবাগানে মিলল ২০০ বাক্স ভর্তি মৃত মৌমাছি

মৌমাছি

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার জোড়কালী এলাকায় লিচুবাগানে আগাম কীটনাশক প্রয়োগের ফলে এক মৌচাষির ২০০টি মৌমাছির বাক্সের সব মৌমাছি মারা গেছে। মৌচাষি আরজু আলমের দাবি, বাগানমালিকের এ আগাম কীটনাশক ব্যবহারে তার দেড় দশকের শ্রম ও জীবিকার প্রধান উৎস ধ্বংস হয়ে গেছে।

আরজু আলম পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার লামকান গ্রামের বাসিন্দা। ২০১০ সালে মাত্র ১৫টি বাক্স দিয়ে মৌচাষ শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে ২০০টি মৌবাক্স। প্রতিবছর অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চলে মৌচাষ করে মধু সংগ্রহ করেন। চলতি মৌসুমে লিচুর মুকুলে মধু সংগ্রহ করতে গত ২০ মার্চ তিনি দিনাজপুরে খামার স্থাপন করেন। কিন্তু খামার স্থাপনের তিন দিনের মাথায় বাগানে কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় মৌমাছির গণমৃত্যু।

খামারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি বাক্সের আশপাশে ছড়িয়ে রয়েছে হাজার হাজার মৃত মৌমাছি। কাঠের ফ্রেমে থাকা চাকগুলোও মৃত মৌমাছিতে পরিপূর্ণ। আরজুর এক সহকারী মৌয়াল বলেন, “মধু না পেলেও চলত, কিন্তু মাছিগুলো না থাকলে মৌচাষই আর সম্ভব নয়। একটি বাক্স নতুন করে কিনতে এখন সাত-আট হাজার টাকা খরচ হয়।”

দিনাজপুর জেলা দেশের লিচু উৎপাদনের অন্যতম প্রধান অঞ্চল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, জেলায় ৫ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে রয়েছে ৫ হাজার ৪৫০টি লিচুবাগান। এর মধ্যে বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না থ্রি, বেদানা, কাঁঠালি এবং মোজাফফরি জাতের লিচুর আবাদ হয়।

প্রতিবছর মৌসুমে মৌচাষিরা লিচুর মধু সংগ্রহে এ অঞ্চলে আসেন। মৌয়ালদের ভাষ্য অনুযায়ী, লিচুর ফুল থেকে মধু সংগ্রহের সময়সীমা মাত্র ১৫ থেকে ২০ দিন। আরজুর খামার থেকে এবার অন্তত ২০-২২ টন মধু সংগ্রহের আশা ছিল, যার বাজারমূল্য আনুমানিক ৬০ লাখ টাকা। কিন্তু মাত্র ২ থেকে আড়াই টন মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।

বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম জানান, “লিচুর ফলন বৃদ্ধিতে মৌমাছির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে মৌয়াল ও বাগানিদের মধ্যে সমন্বয় থাকা উচিত। ২৩ মার্চ মৌয়ালদের কাছ থেকে কীটনাশক প্রয়োগের কথা শুনে আমি নিজেই গিয়ে স্প্রে না করার পরামর্শ দিই। কারণ, তখনো গুটি বের হয়নি। সাধারণত গুটি মোটরদানার মতো হলে স্প্রে করা হয়। কিন্তু সমন্বয়হীনতার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।”

এ ঘটনায় মৌচাষিরা অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। আরজু বলেন, “খামারেই আমাদের ঈদ কেটেছে। ৫ এপ্রিলের পর স্প্রে দিলে ক্ষতি হতো না। কিন্তু এখন সব শেষ। পথে বসার মতো অবস্থা।”

Advertisement
Advertisement

আরো পড়ুন  


Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531