
যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশে একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন কি না—এই প্রশ্ন উঠেছে ডেইলি মেইলের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে।
ঢাকার গুলশান এলাকার ওই ফ্ল্যাট সংক্রান্ত হেবা দলিলকে ঘিরে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। দুদকের অভিযোগ, দলিলে ব্যবহৃত নোটারি ‘ভুয়া’ এবং দলিল প্রস্তুতকারী আইনজীবীর স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।
টিউলিপের দাবি বনাম বাস্তব নথি
৪২ বছর বয়সী লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক দাবি করেছেন, ২০০২ সালে বাবা-মায়ের কাছ থেকে ‘উপহার’ হিসেবে ফ্ল্যাটটি পান এবং ২০১৫ সালে তার ছোট বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর কাছে ‘বৈধভাবে’ হস্তান্তর করেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ঘোষণাপত্রেও এমন দাবি করা হয়েছে।
তবে ডেইলি মেইল বলছে, ঢাকার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নথি অনুযায়ী এখনো ওই ফ্ল্যাটের মালিক টিউলিপ সিদ্দিক নিজেই। এ তথ্য দুদকের তদন্তের সঙ্গেও মিলে যাচ্ছে।
‘হেবা’ দলিল ও ভুয়া নোটারি
হস্তান্তরের জন্য ২০১৫ সালের ৯ জুন একটি ‘হেবা দলিল’ সম্পাদন করা হয়, যেখানে দাতা হিসেবে টিউলিপ এবং গ্রহীতা হিসেবে তার বোনের নাম রয়েছে। দলিলটিতে ফ্ল্যাটের সম্পূর্ণ মালিকানা, অধিকার এবং পার্কিং স্পেস হস্তান্তরের কথা বলা হয়।
দলিলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী সিরাজুল ইসলামের নোটারি সিল ও স্বাক্ষর রয়েছে। কিন্তু দুদকের কাছে তিনি দাবি করেছেন, সিলটি তার হলেও স্বাক্ষরটি জাল। তিনি জানান, “আমি ওই হেবা দলিলের নোটারি করিনি এবং উনাদের চিনি না।”
আইনি জটিলতা ও প্রশ্নবিদ্ধ রেকর্ড
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, ফ্ল্যাটের মালিকানা বৈধভাবে পরিবর্তিত হতে হলে সেটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেকর্ড করতে হয়। দুদকের ভাষ্য মতে, যেহেতু হেবা দলিলের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ, তাই মালিকানা এখনো টিউলিপের কাছেই রয়ে গেছে।
টিউলিপ ও তার আইনজীবীর প্রতিক্রিয়া
টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবী পল থুয়েট জানান, “হেবা যথাযথভাবেই সম্পন্ন হয়েছিল এবং এ সংক্রান্ত দলিলই যথেষ্ট।” সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নথিকে তিনি ‘অবিশ্বাসযোগ্য’ বলে দাবি করেন। টিউলিপের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক’ বলা হয়েছে।
আগের বিতর্ক ও পদত্যাগ
টিউলিপ সিদ্দিক চলতি বছরের জানুয়ারিতে লন্ডনে এক বিতর্কিত ফ্ল্যাট ‘উপহার’ গ্রহণের অভিযোগে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেন। অভিযোগ উঠেছিল, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক ডেভেলপারের কাছ থেকে তিনি ওই উপহার পান।
টিউলিপের অবস্থান
সম্প্রতি এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে টিউলিপ বলেন, “এই অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হয়রানিমূলক। আমি কোনো নোংরা রাজনীতিতে জড়াতে চাই না। যুক্তরাজ্যে উপযুক্ত প্রক্রিয়া আছে, আমি সেসব প্রশ্নের সৎ ও যথাযথ উত্তর দিতে প্রস্তুত।”