
চুল
তালেবান কর্তৃপক্ষের কঠোর নিষেধাজ্ঞার ফলে আফগান নারীদের জন্য চুল বিক্রি এখন এক বিপজ্জনক কাজ। ২৮ বছর বয়সী ফাতিমার মতো অনেক নারী একসময় বৈধভাবে চুল বিক্রি করে সামান্য আয়ের সুযোগ পেতেন। এখন তাঁরা গোপনে চুল বিক্রি করছেন, ঝুঁকি নিয়ে।
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর আফগানিস্তানে নারীদের অধিকার ব্যাপকভাবে খর্ব করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ২০২৩ সালে নারীদের চুল বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ‘পাপ ও পুণ্য আইন’ অনুসারে, মানবদেহের যেকোনো অংশ বিক্রি নিষিদ্ধ, যদিও এই আইন লঙ্ঘনের শাস্তির বিস্তারিত বলা হয়নি।
চুল বিক্রির মাধ্যমে যারা একসময় নিজের প্রয়োজন মেটাতেন, তাঁরা এখন তালেবানের চোখ ফাঁকি দিয়ে এ কাজ করছেন। ফাতিমা জানান, ১০০ গ্রাম চুল বিক্রি করলে পাওয়া যায় মাত্র ৩ ডলার। তাঁর মাসিক আয় মাত্র ১০০ ডলার হওয়ায় এই সামান্য আয়ও তাঁর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
চুল কেনার ক্রেতারা আজও চুল সংগ্রহে নারীদের দ্বারে দ্বারে ঘোরেন, যা রপ্তানি করা হয় পাকিস্তান ও চীনে। চুলের ক্রেতাদের একজন জানিয়েছেন, চুল সংগ্রহ করে গোপনে পাঠানো হয় এসব দেশে। অথচ কাবুল প্রদেশে প্রায় এক টন চুল পুড়িয়ে দিয়েছে তালেবান, ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষার নামে।
এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও নারীরা গোপনে সংগ্রহ করছেন ঝরে পড়া চুল কিংবা নিজেদের ও সন্তানদের চুল কেটে রাখছেন বিক্রির আশায়। হেয়ারড্রেসার নার্গিস জানালেন, সপ্তাহে মাত্র চারজন গ্রাহক পান তিনি। একসময় দিনে ৫-৬ জন আসতেন তাঁর কাছে।
৩৩ বছর বয়সী বিধবা ওয়াহিদা, যিনি তিন সন্তান নিয়ে কঠিন সময় পার করছেন, বলেন, ‘আমি যখন চুল বিক্রি করতে পারতাম, তখন কিছুটা আশা ছিল। এখন সেটা নিষিদ্ধ, তাই ভেঙে পড়েছি।’
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানের ৮৫ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন এক ডলারেরও কম আয় করে। এই বাস্তবতায় নারীদের জন্য চুল বিক্রি একটি বাঁচার উপায় ছিল। আজ তা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু অনিবার্য এক সংগ্রাম।