আইএমএফ
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যে তিন কিস্তির অর্থ পেয়েছে। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় নিয়ে এখন তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছে, তার বাস্তবায়নে সরকারের সক্ষমতা এবং অগ্রগতির ঘাটতি এই অনিশ্চয়তার মূল কারণ।
শর্ত পূরণে জটিলতা: কোথায় পিছিয়ে বাংলাদেশ?
আইএমএফের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের জন্য চারটি মূল শর্ত ছিল:
-
রাজস্ব আদায়ে গতি বাড়ানো
-
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর মুদ্রানীতি
-
বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা
-
সবুজ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে জলবায়ু নীতির বাস্তবায়ন
এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার বিষয়টি। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক এই উদ্দেশ্যে কিছু নীতিগত পরিবর্তন এনেছে এবং "রেফারেন্স রেট" চালু করেছে, বাস্তবতায় ডলারের দর এখনও অঘোষিতভাবে নিয়ন্ত্রণে আছে।
অন্যদিকে রাজস্ব খাতে এনবিআরকে সংস্কারের নির্দেশ দেওয়া হলেও তা এখনও কার্যকর হয়নি। কর প্রশাসন ও নীতি বিভাজনের ঘোষণা এলেও বাস্তবায়ন অনেকটাই শ্লথ।
চতুর্থ কিস্তির বিলম্ব ও সম্ভাব্য সমঝোতা
আইএমএফের ঢাকা সফররত প্রতিনিধি দল এখন এসব শর্ত পূরণ ও তৃতীয় কিস্তির অর্থ ব্যবহারের পর্যালোচনা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জুন পর্যন্ত সময় চেয়ে যুক্তি দিয়েছে, মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে নামলে বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা সম্ভব হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আইএমএফ আপাতত নমনীয় অবস্থানে না গেলে ঋণের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা কঠিন হবে এবং তাতে বিশ্বব্যাংক, এডিবি সহ অন্যান্য দাতাদের বাজেট সহায়তাও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
রাজস্ব ও জ্বালানি খাতে বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ
আইএমএফ চায় চলতি অর্থবছর শেষে জিডিপির ০.৫ শতাংশ বাড়তি রাজস্ব আদায়। এনবিআর ৫৭ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও শর্ত শিথিল করার আবেদন জানিয়েছে।
জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর বিষয়ে কিছু অগ্রগতি থাকলেও দাম নির্ধারণের পদ্ধতি এখনও স্বচ্ছ নয়, যা আইএমএফের আরেকটি শর্ত।
অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ: বাস্তবতা মেনে সমঝোতা জরুরি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাস্তবায়নে যতটা সম্ভব অগ্রগতি তুলে ধরে আইএমএফের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা ও সমঝোতা করাই এখন সবচেয়ে জরুরি। কারণ ঋণের অঙ্কের চেয়ে বড় হলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ সম্পর্কে আস্থার বার্তা।
বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সতর্ক করে বলেন, "বাজারভিত্তিক বিনিময় হার আরও বিলম্বিত হলে হঠাৎ বড় চাপ তৈরি হতে পারে। এতে টাকার মান ও মূল্যস্ফীতি দুই দিক থেকেই ঝুঁকি বাড়বে।"
শেষ কথা
আইএমএফের শর্ত মানা কঠিন হলেও একে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আর্থিক সহায়তার দরজা খোলা রাখতে হলে এখনই সময় বাস্তবতা মেনে, নৈতিক ও টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণের।



.png)
.png)