
ফিলিস্তিনি মুক্তি
“আমি একজন শরণার্থী। আমার পরদাদাও শরণার্থী ছিলেন।” — এই কথাগুলো দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের শরণার্থীশিবিরে জন্ম নেওয়া রুওয়াইদা আমিরের। আল জাজিরায় ৬ এপ্রিল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তাঁর জীবনের করুণ অথচ সাহসিকতায় ভরা গল্প। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের দখলদারিত্বে পরদাদা ঘরছাড়া হন। এরপর থেকে শরণার্থীজীবন যেন তাঁদের পরিবারের নিয়তি হয়ে দাঁড়ায়।
রুওয়াইদার জীবন কেটেছে এক শরণার্থীশিবির থেকে আরেকটিতে ঘুরে বেড়িয়ে। ২০০০ সালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাঁদের ঘর গুঁড়িয়ে দেয়। দুই বছর ধরে কোনো ছাদ ছিল না মাথার ওপর। তবুও হার মানেননি রুওয়াইদা। লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন কঠিন পরিস্থিতিতেও। এখন তিনি একজন শিক্ষক ও সাংবাদিক। তাঁর স্বপ্ন ছিল একটি স্বাধীন ও সুন্দর জীবনের। কিন্তু আজও তাঁর ভয়, হয়তো একদিন মৃত্যুর পর তাঁকে শুধু ‘কালো অথবা নীল জামা পরা এক তরুণী’ বলেই চিহ্নিত করা হবে।
রুওয়াইদার মতো আরও অনেক নারী তাঁদের জীবনের গল্পে সাহস ও আশার বার্তা ছড়িয়েছেন।
ইনোভেশনের প্রতীক এনাস আল-ঘুল
ফিলিস্তিনের কৃষি প্রকৌশলী এনাস আল-ঘুল ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলি হামলার পর সৃষ্ট পানির সংকটের সমাধানে এগিয়ে আসেন। পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ ব্যবহার করে সৌরচালিত একটি যন্ত্র তৈরি করেন, যা নোনাপানিকে সুপেয় পানিতে রূপান্তর করত। তিনি সৌরচালিত চুলা, গদি ও ব্যাগও তৈরি করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় তাঁর আবিষ্কার হয়ে ওঠে জীবন বাঁচানোর হাতিয়ার।
জীবনদায়ী শিরিন আবেদ
শিশুচিকিৎসক শিরিন আবেদ গাজার একাধিক হাসপাতালে নবজাতকদের চিকিৎসা দিয়েছেন। আল-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্সের পরিচালক হিসেবে সীমিত ব্যয়ে চিকিৎসা দেওয়ার পদ্ধতি তৈরি করে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেন। নিজের বাড়ি হারিয়ে শরণার্থীশিবিরে ঠাঁই নিলেও চিকিৎসা চালিয়ে গেছেন নিরলসভাবে। যুদ্ধ পরিস্থিতির ভয়াবহতা তাঁকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে।
প্রতিবাদের রূপান্তর সবেয়া আবু রাহমা
২০০৯ সালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ছোড়া গ্যাস গ্রেনেডে মারা যান ইব্রাহিম আবু রাহমা। দুই বছর পর নিহত হন তাঁর বোন জওয়াহের। তাঁদের মা সবেয়া সেই গ্রেনেডের খোসায় জলপাই গাছ ও ফুল চাষ করে সৃষ্টি করেন এক ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ। জীবনের মধ্যে দিয়ে মৃত্যুকে অতিক্রম করার সেই প্রচেষ্টা আজও মানুষের মনে সাহস জোগায়। কোথাও এক শরণার্থীশিবিরে মারা যান তিনি—এই তথ্যও নিশ্চিত নয়।
ফিলিস্তিনের শরণার্থীশিবির থেকে উঠে আসা এসব গল্প শুধুই বেদনার নয়, এগুলো জীবনের, প্রতিরোধের এবং আশার প্রতীক। যেসব মানুষ নিখোঁজ বা মৃত—তাঁদের গল্প আজও ছড়িয়ে পড়ে ফিলিস্তিনের প্রত্যন্ত প্রান্তে, হয়ে ওঠে সংগ্রামের অনুপ্রেরণা।