ঢাকা,  বুধবার
১৬ এপ্রিল ২০২৫

Advertisement
Advertisement

স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতা আমদানি বন্ধ, দেশীয় বস্ত্রশিল্পে স্বস্তির সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ১৫:৫২, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ১৫:২৯, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতা আমদানি বন্ধ, দেশীয় বস্ত্রশিল্পে স্বস্তির সম্ভাবনা

সুতা

বিটিএমএর দাবির পর এনবিআরের সিদ্ধান্ত, কার্যকর আজ থেকেই

বাংলাদেশে ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আজ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সিদ্ধান্তটি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করার কথা জানানো হয়েছে। সংশোধিত এই প্রজ্ঞাপনের ফলে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা ও বুড়িমারীসহ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুবিধা বাতিল হলো।


দেশীয় সুতার সুরক্ষায় এই পদক্ষেপ

এ সিদ্ধান্তের মূল পেছনে রয়েছে দেশীয় টেক্সটাইল মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)-এর দাবির প্রতিফলন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিটিএমএ দাবি তোলে, ভারত থেকে স্থলবন্দর হয়ে আসা সস্তা সুতা দেশের সুতা উৎপাদনকারী মিলগুলোর জন্য বড় ধরনের প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করছে। এই দাবির ভিত্তিতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন গত মার্চে এনবিআরকে লিখিতভাবে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করার সুপারিশ করে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, স্থলবন্দরে এখনো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সুতা কাউন্ট নির্ণয়ের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। ফলে মূল্য নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় দেশীয় শিল্পকে রক্ষায় সমুদ্রপথে সুতা আমদানি চালু রেখে স্থলপথে আমদানি বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়।


ভারতীয় সুতার প্রভাব

বাংলাদেশে মূলত ভারতীয় সুতা পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে গুদামজাত হয়ে বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করে। এই সুতার দাম চীন, তুরস্ক বা উজবেকিস্তানের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় স্থানীয় শিল্পকারখানাগুলো তাদের উৎপাদিত সুতা বিক্রি করতে সমস্যায় পড়ছিল। অভিযোগ রয়েছে, স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করা ভারতীয় সুতার ঘোষিত মূল্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে নির্ধারিত দামের চেয়েও কম থাকে, যার ফলে শুল্ক ফাঁকির আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

এ কারণে দেশীয় সুতা উৎপাদকরা মূল্য ও মানে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছিলেন, ফলে অনেক মিল ঝুঁকির মুখে পড়ে যায়। এনবিআরের নতুন সিদ্ধান্তে স্থানীয় উদ্যোক্তারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।


শুধু সমুদ্রপথে সুতা আমদানি চলবে

প্রজ্ঞাপনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি নিষিদ্ধ হলেও সমুদ্রপথ বা অন্য মাধ্যমে সুতা আমদানিতে কোনো বাধা নেই। এতে করে যারা বিদেশি সুতা আমদানি করতে চান, তারা এখন শুধুমাত্র সমুদ্রপথ বা অন্যান্য অনুমোদিত মাধ্যমে আমদানি করতে পারবেন। এতে একদিকে যেমন সঠিক মূল্য নির্ধারণ সহজ হবে, তেমনি রাজস্ব আদায় এবং মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।


বস্ত্রশিল্পে আশার আলো

বিটিএমএসহ দেশীয় টেক্সটাইল মালিকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশীয় শিল্পের বিকাশে নতুন গতি আসবে। দেশে তৈরি সুতার চাহিদা বাড়বে এবং দেশীয় শিল্পপণ্য সুরক্ষা পাবে। এতে করে স্থানীয় উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হবেন, এবং নতুন বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে।


এনবিআরের এই সিদ্ধান্ত বস্ত্রশিল্পকে দীর্ঘমেয়াদে সহায়তা করতে পারে, তবে আমদানিকারক ও পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জও বটে। সামনের দিনে এই সিদ্ধান্তের বাস্তবিক প্রভাব মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করা হবে বলেও আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Advertisement
Advertisement

আরো পড়ুন  


Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531