
খনিজ সম্পদ
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের জেরে সংকটে পড়েছে বিরল খনিজের বৈশ্বিক সরবরাহ। আইফোনসহ আধুনিক প্রযুক্তি ও সামরিক সরঞ্জামে অপরিহার্য এ খনিজের রপ্তানি বন্ধে চীনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত পশ্চিমা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে বিরল খনিজের সন্ধান আশার আলো দেখাচ্ছে।
চীনের নিষেধাজ্ঞা ও বৈশ্বিক প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলসহ বিভিন্ন কোম্পানি বিরল মৃত্তিকা ধাতুর জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল। চীন বিশ্বে বিরল খনিজের সবচেয়ে বড় উৎপাদক ও সরবরাহকারী। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চুম্বকসহ বিরল মৌলের রপ্তানি চীন থেকে সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে, যা প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা খাতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
বিশেষ অনুমতি ছাড়া এখন চীন থেকে সামারিয়াম, ডোলিনিয়াম, টারবিয়াম, ডিসপ্রোসিয়াম, লিউটেনিয়াম, স্ক্যানডিয়াম, ইট্রিয়ামসহ প্রায় ১৭টি মৌল রপ্তানি করা যাবে না। এতে আইফোন, কম্পিউটার, চিপ, ইলেকট্রিক গাড়ি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানাগুলোতে সংকট দেখা দিচ্ছে।
বিরল খনিজ: আধুনিক প্রযুক্তির রসদ
বিরল খনিজ বলতে ল্যান্থানাইড সিরিজের ১৫টি মৌল, স্ক্যান্ডিয়াম ও ইট্রিয়ামকে বোঝায়। এসব মৌল মুঠোফোন, কম্পিউটার, এলইডি ডিসপ্লে, বৈদ্যুতিক গাড়ি, জেট ইঞ্জিন, স্যাটেলাইট, বায়ু টারবাইন, সৌর প্যানেল এমনকি অস্ত্র তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। এগুলোর উৎপাদন ও বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল ও ব্যয়বহুল।
চীন বিশ্বের ৪ কোটি ৪০ লাখ মেট্রিক টন মজুত নিয়ে শীর্ষে রয়েছে। তারপর রয়েছে ব্রাজিল (২ কোটি ১০ লাখ), ভারত (৬৯ লাখ) ও অস্ট্রেলিয়া (৫৭ লাখ)। উৎপাদনেও চীন সবার ওপরে—২০২৪ সালে দেশটি উৎপাদন করেছে ২ লাখ ৭০ হাজার টন বিরল খনিজ।
বাংলাদেশে বিরল খনিজের সন্ধান
বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) গত দুই দশকে গবেষণায় দেশের নদী বালু, চরাঞ্চল, সৈকত বালু ও কয়লাখনি থেকে বিরল খনিজের সন্ধান পেয়েছে। গাইবান্ধার যমুনা নদীর বালু, ধরলা নদীর তলদেশ এবং দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে প্রাপ্ত নমুনায় বিরল মৌল যেমন স্যামারিয়াম, গ্যাডোলিনিয়াম, টারবিয়াম, ইউরেনিয়াম ও থোরিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বড়পুকুরিয়ার কয়লা ও পোড়া ছাইয়ে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য পরিমাণ বিরল খনিজ রয়েছে। প্রতি কেজি ছাইয়ে যেখানে ৬০০ মিলিগ্রাম থাকলেই যথেষ্ট, সেখানে পাওয়া গেছে ৭০০ থেকে ৮০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত।
প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ
গবেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশের নদী বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন টন বালু বহন করে আনে, যা বিরল খনিজ আহরণের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়। তবে, এর পূর্ণ বাণিজ্যিক ব্যবহারে এখনও বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে—প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, গবেষণাগার সুবিধা ও অর্থায়নের ঘাটতি অন্যতম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের নিজস্ব বিরল খনিজ আহরণ সম্ভব হলে তা কেবল আমদানিনির্ভরতা কমাবে না, বরং বৈশ্বিক বাজারেও বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূ-অর্থনৈতিক অবস্থানে যেতে পারে।