
সরকারি কর্মচারী
দাবিদাওয়া আদায়ে সংগঠিত আন্দোলনে বারবার রাজপথে নেমেছেন সরকারি কর্মচারীরা। বিশেষ করে গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের পর তাঁরা একের পর এক কর্মসূচি হাতে নেন। এমন দলবদ্ধ আন্দোলনের পথ বন্ধ করতে সরকারি চাকরি আইন সংশোধনে উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নতুন একটি অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করেছে।
সূত্র জানায়, সরকারের নির্দেশনা পাওয়ার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগ দ্রুততার সঙ্গে সংশোধনের কাজ শেষ করে। অন্য সময় ফাইল প্রক্রিয়াভুক্ত হয়ে সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হলেও এবার সরাসরি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ফাইল প্রস্তুত করেন। খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, তিনজনের বেশি সরকারি কর্মচারী একত্র হয়ে কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন না। ফলে আইনটি অধ্যাদেশ আকারে জারি হলে সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনের সব পথ কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে।
এই আইন সংশোধনের বিষয়টি সরাসরি স্বীকার না করলেও তিনজন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা আমাদের কাজ শেষ করেছি। এখন সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।’
অধ্যাদেশ জারি সংক্রান্ত বিষয়গুলো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি কমিটি রয়েছে। সরকারি চাকরি আইন সংশোধনের খসড়া ওই কমিটিতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গ্রামীণ ব্যাংক সংশোধন অধ্যাদেশের পাশাপাশি সরকারি চাকরি আইন সংশোধনের খসড়াও তোলা হতে পারে।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মখলেছুর রহমান এ বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য না করলেও বলেন, ‘আইন সংশোধন হলে আপনারা জানতে পারবেন। আমরা গোপনে কিছু করব না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের এই উদ্যোগে সরকারি চাকরিজীবীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাঁদের মতে, সরকারের শীর্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তাদের অবস্থান এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সীমিত মেয়াদ—এই দুই পরিস্থিতি মিলিয়ে তাঁরা দাবি-দাওয়া আদায়ের গণতান্ত্রিক পথ বন্ধ করতে চাচ্ছেন।
গত ৫ আগস্টের পর থেকে সরকারি কর্মকর্তারা যেভাবে সরব হয়েছেন, তা নিয়ে সরকার বেশ চাপে পড়ে। ডিসি নিয়োগকে কেন্দ্র করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে উপসচিবদের হট্টগোল, সচিবালয়ে ঘেরাও কর্মসূচি, শোডাউন, ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য—এসবই নতুন আইন সংশোধনের অন্যতম পটভূমি হয়ে উঠেছে।
এই প্রেক্ষাপটে সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার নতুন আইন সংশোধনের পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক ক্ষেত্রেই যৌক্তিকতা বোধ হারিয়েছি। অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিবেরা যেভাবে বারান্দায় শুয়ে পড়েছেন, সেটি প্রশাসনের মর্যাদার সঙ্গে যায় না। কিছু বিধিনিষেধ প্রয়োজন—রাষ্ট্র চালাতে গেলে শৃঙ্খলা চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগেও অনেকেই বঞ্চিত ছিলেন। কিন্তু এখন কেন হঠাৎ সবার দাবি একসঙ্গে সামনে আসছে? এসব আচরণ ঠেকাতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ আমি সমর্থন করি।’
এই আইন সংশোধনের বাস্তবায়ন হলে সরকারি চাকরিজীবীদের আন্দোলনের পথ কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এই কঠোর বিধান আদৌ কার্যকর হয় কি না, তা নির্ভর করবে সরকার কতটা দ্রুত ও কার্যকরভাবে অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করে তার ওপর।