ঢাকা,  শনিবার
১৯ এপ্রিল ২০২৫

Advertisement
Advertisement

“দুই হাত নেই, তবু স্বপ্ন দেখে”—গাজার ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে নয় বছরের মাহমুদের সাহসী লড়াই

প্রকাশিত: ১৪:১৭, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

“দুই হাত নেই, তবু স্বপ্ন দেখে”—গাজার ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে নয় বছরের মাহমুদের সাহসী লড়াই

ফিলিস্তিনি শিশু

নয় বছর বয়সী মাহমুদ আজ্জুর, ফিলিস্তিনের গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত পুরোনো শহরের এক ছোট্ট বাসিন্দা। একসময় তার জীবন ছিল অন্য দশটা শিশুর মতোই। সে মায়ের জন্য বাজার থেকে সবজি আনত, বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করত, হাসিখুশি থাকত। কিন্তু এক ইসরায়েলি ড্রোন হামলা তার সেই নির্মল শৈশব কেড়ে নেয় চিরতরে। গত বছরের মার্চ মাসে সেই হামলায় ধ্বংস হয়ে যায় মাহমুদের ঘরবাড়ি, আর বিস্ফোরণে সে হারায় তার দুটি হাত।

তখন সে বুঝতেই পারেনি কী ঘটেছে। আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাহমুদ বলে, “আমি ভেবেছিলাম আমি শুধু পড়ে গেছি। কিন্তু আমি নিজেকে মাটিতে খুঁজে পেলাম, ক্লান্ত লাগছিল, আর ভাবছিলাম কী ঘটেছে।” ধীরে ধীরে তাকে জানানো হয়—তার দুই হাত আর নেই। “আমার মা তখন আমাকে বলেছিল, আমি আমার হাত হারিয়েছি। আমি কাঁদতে শুরু করেছিলাম। আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল,”—কথাগুলো বলতে গিয়ে আজও কাঁপে মাহমুদের কণ্ঠ।

শুধু হাত হারানোই নয়, গাজার বাস্তবতা আরও নির্মম। ইসরায়েলি অবরোধে বন্ধ চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ, নেই পর্যাপ্ত ওষুধ বা সেবা। মাহমুদের অস্ত্রোপচার করা হয় চেতনানাশক ছাড়া। সেই যন্ত্রণার কথা বলতে গিয়ে মাহমুদ জানায়, “যখন তারা আমার অস্ত্রোপচার করছিল, আমি জেগে ছিলাম। আমি ব্যথা সহ্য করতে পারছিলাম না, আমি খুব জোরে চিৎকার করছিলাম। আমার কণ্ঠস্বর হাসপাতাল করিডোরজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল।”

জাতিসংঘের তথ্য মতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০ জন শিশু হাত বা পা হারিয়েছে গাজায়। অনেক সময় তারা অস্ত্রোপচারের সময় জ্ঞান হারায় না, সেই ভয়াবহ ব্যথা তাদের স্থায়ী দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়।

বর্তমানে উন্নত চিকিৎসার জন্য মাহমুদ কাতারে অবস্থান করছে। এখন সে তার পা দিয়ে লেখে, গেম খেলে, জামা পরার চেষ্টা করে। কিন্তু সবকিছুতেই সাহায্যের প্রয়োজন হয়। তার গলায় এখনও সেই দিনগুলোর স্মৃতি ভেসে ওঠে—“এখন সবকিছুই কঠিন, যেমন নিজে নিজে খাওয়া বা বাথরুমে যাওয়া... কিন্তু আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।”

তবু মাহমুদ স্বপ্ন দেখে। তার চোখে একদিন সে গাজায় ফিরবে, ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহরটাকে গড়ে তুলবে নতুন করে। তার প্রত্যাশা, “বিশ্ব একদিন এই যুদ্ধ বন্ধ করবে। আমরা আমাদের ভূমিতে থাকতে চাই। আমরা চাই না ইসরাইলিরা তা কেড়ে নিক।” তার কণ্ঠে তখন ক্ষোভ আর বেদনার মিশ্রণ, “সেখানে মানুষ মারা যাচ্ছে। আর আমার বাড়ি বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি এভাবে কীভাবে বাঁচব?”

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন এক লাখের বেশি। ২৩ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নেই ঘর, নেই খাবার, নেই চিকিৎসা—সবকিছু পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে।

তবু এই ধ্বংসস্তূপের মাঝেই এক শিশুর স্বপ্ন বেঁচে আছে। দুটো হাত না থাকলেও মাহমুদ হাল ছাড়েনি। সাহস আর অদম্য মানসিকতা নিয়ে সে ভবিষ্যতের জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। তার জীবনের এই যুদ্ধ যেন পৃথিবীর বিবেককে নাড়িয়ে দেয়, যেন তার মতো আর কোনো শিশুকে হাত হারিয়ে বড় হতে না হয়।

 
Advertisement
Advertisement

আরো পড়ুন  


Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531