
কারাগার
কারাবন্দীদের ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি সম্মান জানিয়ে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর সুযোগ চালু করেছে ইতালি। গতকাল শুক্রবার দেশটির উমব্রিয়া অঞ্চলের টের্নি শহরের একটি কারাগারে এই উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। সেখানে এক বন্দীকে তাঁর নারী সঙ্গীর সঙ্গে বিশেষভাবে প্রস্তুত একটি কক্ষে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়।
এই উদ্যোগটি এসেছে ইতালির সাংবিধানিক আদালতের এক যুগান্তকারী রায়ের পর। আদালতের আদেশে বলা হয়, কারাবন্দীদের উচিত তাঁদের স্বামী-স্ত্রী বা দীর্ঘমেয়াদি সঙ্গীদের সঙ্গে প্রহরী ছাড়াই অন্তরঙ্গ সাক্ষাতের অধিকার পাওয়া, যা ইউরোপের অধিকাংশ দেশেই অনুমোদিত। ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, সুইডেন, ও নেদারল্যান্ডসের মতো দেশ ইতিমধ্যেই এই সুবিধা চালু করেছে।
উমব্রিয়ার বন্দী অধিকারবিষয়ক ন্যায়পাল জিউসেপে কাফোরি জানান, “সবকিছুই শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে, আমরা খুশি। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যাঁরা সাক্ষাৎ করবেন তাঁদের গোপনীয়তা রক্ষা করা।”
তিনি আরও বলেন, এটি একটি পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আরও বন্দী ও তাঁদের সঙ্গীদের জন্য একই সুবিধা দেওয়া হবে।
এদিকে ইতালির বিচার মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে একটি নির্দেশনা জারি করে জানিয়েছে, যেসব বন্দী এই অন্তরঙ্গ সাক্ষাতের অনুমতি পাবেন, তাঁদের বিছানা ও টয়লেটসহ একটি কক্ষে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত সময় কাটানোর সুযোগ থাকবে। তবে নিরাপত্তার কারণে কক্ষের দরজা পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না, যেন জরুরি প্রয়োজনে কারারক্ষীরা হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
এই পদক্ষেপ এসেছে এমন এক সময়ে, যখন ইতালির কারাগারগুলোতে বন্দীর চাপ বেড়ে গেছে এবং আত্মহত্যার হার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারিভাবে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ইতালির কারাগারগুলোতে ৬২ হাজারেরও বেশি বন্দী রয়েছে, যা কারাগারের ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় ২১ শতাংশ বেশি।
বিশ্লেষকদের মতে, এই উদ্যোগ বন্দীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং পারিবারিক সম্পর্ক রক্ষা করতে সহায়ক হতে পারে। একই সঙ্গে এটি একটি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বন্দীদের অধিকার রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।
তবে পুরো প্রকল্প এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সফল বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে এর ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ এবং ইতালির কারা সংস্কারের দিকনির্দেশনা।