
আমিরাত
? মার্কিন বোমা হামলা ও হুদাইদায় সম্ভাব্য স্থল আক্রমণ—মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা
ইয়েমেনের কৌশলগত হুদাইদা বন্দর ও আশেপাশের অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত-সমর্থিত বাহিনীর সম্ভাব্য স্থল আক্রমণের গুঞ্জনে লোহিত সাগর আবারো অস্থির হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের ১৫ মার্চ থেকে শুরু হওয়া মার্কিন সামরিক অভিযান এখন আরও তীব্র হয়ে উঠেছে, যার লক্ষ্য আনসারুল্লাহর প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করা এবং ইয়েমেনে আমেরিকার কৌশলগত স্বার্থ টিকিয়ে রাখা।
? বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর হামলা, বাড়ছে মানবিক সংকট
সানার মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবকাঠামোগত লক্ষ্যবস্তুতে হামলার ফলে ইতোমধ্যে অসংখ্য বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কায় হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হুদাইদা ও সানার দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত-সমর্থিত ইয়েমেনি দক্ষিণাঞ্চলীয় অন্তর্বর্তী পরিষদের বাহিনী মার্কিন বিমান সহায়তায় অগ্রসর হচ্ছে।
⚓ হুদাইদা: ইয়েমেনের প্রাণশক্তি
ইয়েমেনি জাতীয় ঐক্যমোর্চার সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন হুদাইদা বন্দর শুধুমাত্র বাণিজ্যের নয়, বরং মানবিক সাহায্য প্রবেশের অন্যতম প্রধান পথ। এই বন্দরের ওপর আক্রমণ হলে তা প্রায় ২ কোটি মানুষের জন্য জীবনরক্ষাকারী খাদ্য, ওষুধ ও সহায়তা সরবরাহে গুরুতর বাধা সৃষ্টি করবে। বন্দরটি অবরুদ্ধ হলে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির সম্ভাবনা অত্যন্ত বাস্তব হয়ে উঠবে।
? আঞ্চলিক রাজনীতির জটিলতা
সংযুক্ত আরব আমিরাত লোহিত সাগরে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে মরিয়া। এই অঞ্চলের ওপর প্রভাব বিস্তারে তারা সৌদি আরবের সঙ্গে একপ্রকার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তবে ৮ বছরব্যাপী যুদ্ধে জর্জরিত সৌদি আরব এখন সরাসরি নতুন সংঘাতে জড়াতে চায় না। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের দুই মিত্র রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘাতের ধরণ ও কৌশল নিয়েও বিভক্তি দেখা দিচ্ছে।
?️ জ্বালানির বাজারে ঝুঁকি
বাব আল-মান্দাব প্রণালীর ওপর নিয়ন্ত্রণ মানে বৈশ্বিক জ্বালানি প্রবাহের ওপর প্রভাব বিস্তার। এই প্রণালি দিয়ে দৈনিক লক্ষ লক্ষ ব্যারেল তেল পরিবাহিত হয়। এই অঞ্চলে নতুন করে সংঘাত শুরু হলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, যার প্রভাব পড়বে জ্বালানির দামে।
? প্রতিরোধ ও আনসারুল্লাহর কৌশল
আল-আকসা তুফান অভিযানের মাধ্যমে আনসারুল্লাহ স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা কেবল ইয়েমেনেই নয়, বরং পুরো লোহিত সাগর অঞ্চলে প্রতিরোধের অক্ষের একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। ৩৫০টিরও বেশি সামুদ্রিক অভিযান চালিয়ে তারা ইসরাইলের ইলাত বন্দরকে কার্যত অচল করে দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক নৌপথে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করেছে। এই প্রতিরোধের জবাবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়েছে এবং ইয়েমেনি লক্ষ্যবস্তুতে বারবার বোমা হামলা চালিয়েছে।
বর্তমান বাস্তবতায় হুদাইদা বন্দরের উপর সম্ভাব্য স্থল হামলা শুধুমাত্র একটি কৌশলগত লড়াই নয়, বরং তা গোটা অঞ্চলজুড়ে মানবিক বিপর্যয় এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টির একটি ঝুঁকিপূর্ণ প্রক্রিয়া। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের আক্রমণ আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা বাড়াবে, বিশ্ব বাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে এবং একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করবে—যার সমাধান কেবল রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব।