ঢাকা,  শনিবার
২৬ এপ্রিল ২০২৫

Advertisement
Advertisement

ভূমিকম্পের ঝুঁকি সত্ত্বেও মিয়ানমারে পারমাণবিক প্রকল্পে রাশিয়ার অগ্রযাত্রা

প্রকাশিত: ১৬:৪৩, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

ভূমিকম্পের ঝুঁকি সত্ত্বেও মিয়ানমারে পারমাণবিক প্রকল্পে রাশিয়ার অগ্রযাত্রা

পুতিন

ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত মিয়ানমারে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে পিছু হটছে না রাশিয়া। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটম নিশ্চিত করেছে, সম্প্রতি প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে ব্যাপক প্রাণহানির পরও তারা মিয়ানমারে ছোট আকারের পারমাণবিক স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগে অটল রয়েছে। মার্চ মাসে মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির আওতায় দেশটিতে ১১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি ছোট মডুলার রিয়্যাক্টর (এসএমআর) নির্মাণ করা হবে।

এই ঘোষণা এমন এক সময় এলো, যখন কয়েক সপ্তাহ আগেই ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে দেশটিতে প্রায় ৩,৭০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবু রোসাটম বলেছে, তাদের প্রকল্পে ভূমিকম্প প্রতিরোধী প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সর্বোচ্চ নিরাপত্তা মান অনুসরণ করা হবে।

নির্মিতব্য রিয়্যাক্টরটি রাশিয়ার আরআইটিএম-২০০ এন প্রযুক্তিনির্ভর, যা মূলত বরফভাঙা জাহাজে ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। মিয়ানমারে এই প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন জান্তা সরকারের সঙ্গে রাশিয়ার কৌশলগত সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে, মিয়ানমারের পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ও সুনির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য জানায়নি রোসাটম। রয়টার্সের অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানী নেপিদো ছাড়াও মধ্য বাগো অঞ্চল এবং দাওয়েই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে সম্ভাব্য স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। দাওয়েইতে জান্তা সরকার ও রাশিয়া একটি সমুদ্রবন্দর ও তেল শোধনাগার নির্মাণের পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছে।

সামরিক অভ্যুত্থান-পূর্ব সরকারের পতনের পর থেকে গৃহযুদ্ধকবলিত মিয়ানমারে শাসক জান্তা অধিকাংশ অঞ্চলেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। সহিংসতায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অন্তত ৩৫ লাখ মানুষ। দেশটির কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিও চরম সংকটে পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার মতো সীমিত মিত্রের সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো কৌশলগত উদ্যোগে যুক্ত হওয়া জান্তা সরকারের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও টেকসই বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রচেষ্টা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

মিয়ানমার এখন রাশিয়ার অর্থায়ন ছাড়াও প্রকল্প বাস্তবায়নে বিকল্প অর্থায়ন কৌশল খতিয়ে দেখছে। রোসাটম জানিয়েছে, যৌথ তহবিলের পাশাপাশি স্বল্পসুদে ঋণের ব্যবস্থাও থাকতে পারে। এর আগেও বাংলাদেশ ও মিসরের পারমাণবিক প্রকল্পগুলোতে রাশিয়া এমন অর্থায়নের দৃষ্টান্ত রেখেছে।

অঞ্চলীয় নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণ থেকেও প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। প্রতিবেশী থাইল্যান্ড এর ওপর নজরদারি চালাচ্ছে এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি ও ভূরাজনৈতিক প্রভাব বিশ্লেষণ করছে। ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণের এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক মহলেও বিতর্ক ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। তা সত্ত্বেও, ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপ পেরিয়ে মিয়ানমারে রুশ পারমাণবিক প্রকল্পের অগ্রযাত্রা থেমে নেই।

Advertisement
Advertisement

আরো পড়ুন  


Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531