
সৌদি যুবরাজ
রূপকথার রাজকুমারী অরোরার মতো বাস্তবেও দীর্ঘদিন ধরে ঘুমিয়ে আছেন এক রাজকুমার। সৌদি আরবের যুবরাজ আল–ওয়ালিদ বিন খালেদ বিন তালাল ২০০৫ সাল থেকে কোমায় আছেন, অর্থাৎ প্রায় ২১ বছর ধরে। কোমায় থাকা এই যুবরাজকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ভালোবাসা, অপেক্ষা এবং নিরব এক যুদ্ধের গল্প, যা তাঁকে ‘স্লিপিং প্রিন্স’ নামে পরিচিত করে তুলেছে।
২০০৫ সালে লন্ডনের একটি সামরিক কলেজে পড়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন যুবরাজ আল–ওয়ালিদ। দুর্ঘটনায় তাঁর মস্তিষ্কে মারাত্মক রক্তক্ষরণ হয়, এবং তখন থেকেই তিনি কোমায় চলে যান। সেই থেকে আজ অবধি, তিনি হাসপাতালের বিছানায় নিস্তেজ পড়ে আছেন—দেহে কেবল প্রাণের অস্তিত্ব।
এপ্রিলের ১৮ তারিখ ছিল যুবরাজের ৩৬তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে তাঁর ফুপু প্রিন্সেস রিমা বিনতে তালাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) ভাগ করে নিয়েছেন কিছু আবেগঘন ছবি। শৈশবের স্মৃতি আর বর্তমান বাস্তবতার বিপরীতে দাঁড়িয়ে তিনি লিখেছেন, “আমার প্রিয় আল–ওয়ালিদ, ২১ বছর ধরে তুমি আমাদের হৃদয়ে আছ। আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দিন।”
গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্র ও স্পেনের বিভিন্ন খ্যাতনামা চিকিৎসকেরা যুবরাজের চিকিৎসায় অংশ নিয়েছেন। কিন্তু এত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাঁর জ্ঞান ফেরানো সম্ভব হয়নি। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের কিং আবদুল আজিজ মেডিকেল সিটিতে তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। একটি বিশেষায়িত চিকিৎসা দল নিয়মিত তাঁর সেবায় নিয়োজিত রয়েছে।
২০১৯ সালে যুবরাজের দেহে সামান্য নড়াচড়া দেখা গিয়েছিল, তবে সেটিও ছিল অচেতন অবস্থায়, যা চিকিৎসকদের মতে ‘রিফ্লেক্স মুভমেন্ট’। তাঁর বাবা প্রিন্স খালেদ বিন তালাল এখনো আশা ছাড়েননি। তিনি বলেন, “যদি আল্লাহ চাইতেন তাঁর মৃত্যু হোক, তাহলে দুর্ঘটনার দিনই সেটা হতো। যে আল্লাহ এতদিন তাঁর প্রাণ রেখেছেন, তিনিই চাইলে সুস্থ করে তুলতে পারেন।”
চিকিৎসকেরা যদিও বলছেন, এত দীর্ঘ সময় কোমায় থাকার পর সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে, তবে পরিবার এবং শুভানুধ্যায়ীরা এখনো আশা করে আছেন—ভবিষ্যতের কোনো অগ্রসর চিকিৎসাপদ্ধতি হয়তো তাঁকে আবারও বাস্তব জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারবে।
এ এক নিঃশব্দ যুদ্ধ—একজন ঘুমন্ত রাজকুমার, তাঁর প্রিয়জনদের অপেক্ষা, এবং অসীম আশার এক রূপকথার মতো বাস্তবতা।