
ভারত-পাকিস্তান
ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও সামরিক উত্তেজনা
১৯৪৭ সালে বিভক্তির পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তান পরস্পরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে রয়েছে। একাধিক যুদ্ধ, সীমান্ত সংঘর্ষ ও রাজনৈতিক উত্তেজনা তাদের সম্পর্কের মূল বৈশিষ্ট্য। সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলার মদদের অভিযোগ তুলেছে, পাকিস্তানও পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ফলে সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা জোরালো হয়েছে।
সামগ্রিক সামরিক র্যাঙ্কিং ও সক্ষমতা সূচক
‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার সূচক (জিএফপি) ২০২৫’ অনুযায়ী:
-
ভারত: সামগ্রিকভাবে বিশ্বের ৪র্থ, স্কোর ০.১১৮৪।
-
পাকিস্তান: বিশ্বে ১২তম, স্কোর ০.২৫১৩।
ভারতের বড় জনসংখ্যা, বিশাল বাজেট এবং সামরিক সম্পদ এ অবস্থান নিশ্চিত করেছে। পাকিস্তান তুলনামূলক ছোট অর্থনীতি নিয়েও কৌশলগতভাবে প্রতিযোগিতায় রয়েছে।
সামরিক–বেসামরিক জনশক্তি
-
ভারত:
-
জনসংখ্যা: ১৪০ কোটি।
-
সক্রিয় সেনা: ১৪.৬ লাখ।
-
রিজার্ভ সেনা: ১১.৬ লাখ।
-
আধা সামরিক বাহিনী: ২৫.৩ লাখ।
-
মোট সামরিক জনবল: ৫১ লাখ।
-
-
পাকিস্তান:
-
জনসংখ্যা: ২৫.২ কোটি।
-
সক্রিয় সেনা: ৬.৫৪ লাখ।
-
রিজার্ভ সেনা: ৬.৫ লাখ।
-
মোট সামরিক জনবল: প্রায় ১৭ লাখ।
-
ভারতের জনবল পাকিস্তানের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি হলেও পাকিস্তানের আইএসআই–নিয়ন্ত্রিত অনিয়মিত বাহিনীগুলো বাড়তি সুবিধা দেয়।
প্রতিরক্ষা বাজেট
-
ভারত:
-
বাজেট: ৭,৯০০ কোটি ডলার।
-
জিডিপির ২.১%।
-
-
পাকিস্তান:
-
বাজেট: ১,০০০–১,২০০ কোটি ডলার।
-
জিডিপির ৩.৬%।
-
ভারতের বাজেট পাকিস্তানের ৬–৮ গুণ বেশি, যা আধুনিকীকরণ ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখছে।
স্থলবাহিনী শক্তি
-
ভারত:
-
ট্যাংক: ৪,৬১৪টি।
-
সাঁজোয়া যান: ১,৫১,২৪৮টি।
-
কামান: ৯,৭১৯টি।
-
বিশেষ বাহিনী: প্যারা এসএফ, ঘাতক ফোর্স, এমএআরসিওএস।
-
-
পাকিস্তান:
-
ট্যাংক: ৩,৭৪২টি।
-
সাঁজোয়া যান: ৫০,০০০।
-
কামান: ৪,৪৭২টি।
-
বিশেষ বাহিনী: এসএসজি, এসএসজি নৌ, স্পেশাল সার্ভিস উইং।
-
ট্যাংক ও কামানে ভারতের সংখ্যাগত আধিপত্য থাকলেও পাকিস্তানের আধুনিকায়ন উদ্যোগ উল্লেখযোগ্য।
বিমানবাহিনী শক্তি
-
ভারত:
-
মোট বিমান: ২,২২৯টি।
-
যুদ্ধবিমান: ৫১৩–৬০৬টি।
-
আধুনিক প্ল্যাটফর্ম: এসইউ–৩০এমকেআই, রাফায়েল, তেজস।
-
এস–৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রয়েছে।
-
-
পাকিস্তান:
-
মোট বিমান: ১,৩৯৯–১,৪৩৪টি।
-
যুদ্ধবিমান: ৩২৮–৩৮৭টি।
-
আধুনিক প্ল্যাটফর্ম: এফ–১৬, জেএফ–১৭ থান্ডার, মিরাজ থ্রি/ফাইভ।
-
এইডব্লিউঅ্যান্ডসি: ৭টি।
-
ভারতের স্কোয়াড্রন ঘাটতি থাকলেও বিমানবহরের বৈচিত্র্য পাকিস্তানের চেয়ে বেশি।
নৌবাহিনী শক্তি
-
ভারত:
-
জাহাজ: ২৯৪টি।
-
বিমানবাহী রণতরি: ২টি।
-
সাবমেরিন: ১৮টি (আইএনএস আরিহান্টসহ)।
-
নৌবাহিনীর সদস্য: ৬৭,৭০০ জন।
-
-
পাকিস্তান:
-
জাহাজ: ১২১টি।
-
সাবমেরিন: ৮টি।
-
নৌবাহিনীর সদস্য: ২৩,৮০০ জন।
-
ভারতের নৌবাহিনী গভীর সমুদ্রে অভিযান চালানোর সক্ষমতা রাখে, যেখানে পাকিস্তান মূলত উপকূলীয় প্রতিরক্ষায় মনোযোগী।
পারমাণবিক সক্ষমতা ও নীতি
-
ভারত:
-
পারমাণবিক অস্ত্র: ১৩০–১৪০টি।
-
নীতিমালা: ‘নো ফার্স্ট ইউজ’ (প্রথমে ব্যবহার না করার নীতি)।
-
ডেলিভারি সিস্টেম: অগ্নি–থ্রি/ফাইভ, মিরাজ ২০০০, রাফায়েল।
-
-
পাকিস্তান:
-
পারমাণবিক অস্ত্র: ১৪০–১৫০টি।
-
নীতিমালা: ‘ফুল–স্পেকট্রাম ডেটারেন্স’ (প্রয়োজনে আগে ব্যবহার)।
-
ডেলিভারি সিস্টেম: শাহিন–টু/থ্রি, এফ–১৬, বাবর ক্রুজ মিসাইল।
-
পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ভারতের চেয়ে সামান্য বেশি হলেও ভারতের ডেলিভারি সিস্টেম বেশি উন্নত ও বৈচিত্র্যময়।
কৌশলগত জোট ও চ্যালেঞ্জ
-
ভারত: ইসরায়েল, রাশিয়া, ফ্রান্সের সঙ্গে কৌশলগত জোট।
-
পাকিস্তান: চীনের গভীর সমর্থন, সীমিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা।
ভারতের শক্তি বড় বাজেট, জনবল ও আন্তর্জাতিক জোট হলেও চীন ও পাকিস্তান–দুটো ফ্রন্টে মনোযোগ বিভাজন চ্যালেঞ্জ। পাকিস্তান অর্থনৈতিক সংকটে থাকলেও চীনের সমর্থন ও পরমাণু কৌশলে তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।