আর্থার ফ্লেকের কথা মনে আছে? সমাজের কশাঘাতে যিনি হয়ে উঠেছিলেন মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত। যদি মনে না পড়ে, তাহলে একটু চিন্তা করে দেখুন, মেরুন ব্লেজার-প্যান্টের ওপর অনেকটাই হলুদ রঙের কটি পরা আর মুখ-ঠোঁট নয়, চোখের পাশে সাদা, লাল ও নীল রঙে মাইমের মতো আবৃত সাড়া জাগানো সেই ভিলেনের কথা ভাবুন। জ্বী, ঠিকই ধরেছেন। ‘জোকার’।
২০১৯ সালে মুক্তি পেয়েছিল বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগানো সিনেমা ‘জোকার’। টড ফিলিপস পরিচালিত ‘জোকার’ সিনেমার গল্পে দেখা যায়, ১৯৮১ সালের দিকের ঘটনা। আর্থার ফ্লেক নামের ব্যর্থ এক কমেডিয়ান হঠাৎ শহরে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, সে শহরের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাতে শুরু করে। আর্থারের ‘জোকার’ চরিত্রটির মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে সমাজের নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের কষ্ট ও দুর্দশা।
সিনেমাটি মুক্তির পর তুমুল আলোচনা শুরু হয়। একই সঙ্গে চলচ্চিত্র উৎসবে একাধিক পুরস্কার ও বক্স অফিসে সুপার হিট তকমা খুবই কম সিনেমা ভাগ্যে জোটে। সেখানে ব্যতিক্রম ছিল ‘জোকার’। সিনেমাটি ভেনিস উৎসবে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার ও পরে একাধিক উৎসবে সেরা সিনেমার পুরস্কার জেতে। সিনেমার কিছু বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে– এমন বিতর্কও দেখা দেয়। আলোচিত এ সিনেমা অস্কারে ১১টি শাখায় মনোনয়ন পেয়ে সেরা অভিনেতাসহ দুটি শাখায় পুরস্কার জিতে নেয়। এবার আসছে সিনেমাটির সিকোয়েল। নাম ‘জোকার: ফোলি আ ডিউক্স’।
জোকার সিনেমার প্রথম পার্ট যেখানে শেষ হয়েছিল, এবার থেকেই শুরু হয়। আদালতে বিচার চলছে আর্থারের। পাঁচটা খুনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যদিও হার্লে কুইনের সঙ্গে প্রথম আলাপেই অম্লানচিত্তে সে বলে দেয়, আসলে সংখ্যাটা ছয়। নিজের অসুস্থ মাকেও সে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেছে। এটা অবশ্য প্রথম ছবির সব দর্শকই জানেন। গোটা শহরে আর্থারের অসংখ্য ভক্ত। জোকার সেজে তারা ঘুরে বেড়ায় গথামের রাস্তায়। তাদের কাছে আর্থার কোনও অপরাধী নয়। সে নায়ক। বিচার তো বিচারের নিয়মেই চলে। এরই মধ্যে হার্লেকুইনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে আর্থার। জোকারের ‘প্রেমিকা’ হার্লে কুইন আদপে ছিল তারই মনোবিদ। নিজের রোগীর কাউন্সেলিং করতে গিয়ে একসময় নিজেই হয়ে পড়ে অপরাধী! একটা অদ্ভুত সম্পর্ক গড়ে উঠতে থাকে দুজনের। সেই সম্পর্ককে নির্মাণ করতে গানের আশ্রয় নিয়েছেন টড। আর এখানেই ছবিটি চরিত্রগত ভাবে অনেকটাই আলাদা হয়ে যায় আগেরটির থেকে। এবার আর্থার ফ্লেক একা নন, আর্থারের প্রেমিকা হার্লেকুইনও আসছেন তাকে ধ্বংসে সহায়তা করতে।
গত বারের মতো এবারও আর্থার ওরফে জোকারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জোয়াকিন ফিনিক্স। এবার লেডি গাগা আবির্ভূত হয়েছেন মূল নায়ক ‘আর্থার ফ্লেক’-এর প্রেমিকা ‘হার্লেকুইন’-এর চরিত্রে। এর আগের জোকার সিনেমায় নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন হলিউড অভিনেত্রী মার্গট রবি। আপাতদৃষ্টিতে ‘আর্কহাম অ্যাসাইলাম’ সেন্টারে আর্থার ও হার্লেকুইন জুটির মিলিত হওয়া এবং প্রেমে পড়ার কথা মনে হবে। পরে পালিয়ে একটি মিউজিক্যাল দলও গঠন করে দুই চরিত্র। শুরু থেকেই জোকার সিনেমার সিকোয়েলকে বলা হচ্ছিল ‘মিউজিক্যাল’ হবে। তবে পরিচালক টড ফিলিপস বলেন, এটি মিউজিক্যাল সিনেমা নয়, তবে সংগীত এই সিনেমার একটি অপরিহার্য উপাদান।’
‘জোকার’ সিনেমায় গোথাম শহরের এক কমেডিয়ানের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছিল। সমাজের নিপীড়িত মানুষের প্রতিশোধস্পৃহা ও জমানো ক্ষোভকেই ‘জোকার’ চরিত্রটির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। ডিসি কমিক্স এর মূল গল্পে হার্লেকুইন চরিত্রটি ছিল জোকারের মনোচিকিৎসক। তবে জোকার টু-তে হার্লেকুইনের ঠিক কী ভূমিকায় আছেন, তা নিশ্চিত নয়। ট্রেলারে দেখা যায় আর্থার এবং হার্লেকুইনকে দেখানো হয়েছে ‘আর্কহাম অ্যাসাইলাম’-এ। আর্থারকে নিরাপত্তারক্ষীরা নিজেদের একটি অনুষ্ঠানে পারফরম্যান্স করানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছিল, তখন হার্লেকুইনকে এক জায়গায় লাইন ধরতে দেখা যায়। ডিসি কমিক্সের মূল গল্পে হার্লেকুইন জোকারের প্রেমে পড়েছিলেন, সমব্যথীও ছিলেন। কিন্তু হার্লেকুইন যদি সেখানে রোগী হিসেবেই থাকেন, তাহলে সে কীভাবে জোকারকে পালাতে সাহায্য করতে পারে, তা ব্যাখ্যা করতে অবশ্য সিনেমাটি দেখাই লাগবে। যা-ই হোক এখন দেখার বিষয় সিনেমাটি কতটা দর্শকদের বিনোদন দেবে, তা জানা যাবে আগামীকাল। কারণ, কালই বিশ্বব্যাপী মুক্তি পাচ্ছে সিনেমাটি।