
ইন্টারনেট ব্যবহার
এশিয়া মহাদেশ ইন্টারনেট ব্যবহারের এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অঞ্চল হিসেবে ৫০ শতাংশ আইপিভি ৬ (ইন্টারনেট প্রোটোকল ভার্সন ৬) সক্ষমতা অর্জন করেছে এই অঞ্চল। এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টার (এপিএনআইসি)-এর গবেষণাগার পরিচালিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য।
এশিয়ার শীর্ষে চীন ও ভারত
এ অঞ্চলের আইপিভি ৬ সক্ষমতার শীর্ষে রয়েছে ভারত (৭৮.১৬%), এরপর রয়েছে চীন (৪৫.২৮%) এবং পাকিস্তান (২০.৫৯%)। এশিয়ার এই অগ্রগতির পেছনে রয়েছে ব্যাপক সংখ্যক সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, দৃঢ় জাতীয় নীতিমালা এবং বৃহৎ বিনিয়োগ।
আইপিভি ৬ প্রযুক্তি শুধু ঠিকানা সংখ্যা বাড়ায়নি, বরং এনক্রিপশন, গোপনীয়তা, উন্নত রাউটিং, এবং মোবাইল নেটওয়ার্কে কার্যকারিতা বৃদ্ধিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা এনেছে।
এপিএনআইসি মহাপরিচালকের মন্তব্য
এক ব্লগ পোস্টে এপিএনআইসি-এর মহাপরিচালক জিয়া রং লো বলেন, “এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা আইপিভি ৬ নিয়ে আঞ্চলিক যাত্রার ২৫ বছর পর অর্জিত হয়েছে।” তবে তিনি পরিষ্কার করেন, এই সক্ষমতা মানে নয় যে এশিয়ার সব ডিভাইস এখন আইপিভি ৬ ব্যবহার করে। এটি ৩০ দিনের গড় ট্রাফিক বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে হিসেব করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী তুলনামূলক চিত্র
-
এশিয়া: বিশ্বব্যাপী আইপিভি ৬ ব্যবহারকারীর ৬৪%
-
উত্তর আমেরিকা (যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা): মাত্র ৯.৬%
-
ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়া (RIPE NCC অঞ্চল): ১৬% ব্যবহারকারী, ২৮% সক্ষমতা
-
দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান (LACNIC): ১০.৭% ব্যবহারকারী, ৩৯% সক্ষমতা
-
আফ্রিকা (AFRINIC): শুধু ৪% হোস্ট সক্ষম, মাত্র ০.৯% ব্যবহারকারী
আইপিভি ৬-এর গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
আইপিভি ৪-এ ৩২-বিট ঠিকানা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে বর্তমানে ঠিকানা সংকট স্পষ্ট। আইপিভি ৬ সেই সংকটের সমাধান এনে দিয়েছে, কারণ এটি ১২৮-বিট ঠিকানা ব্যবস্থায় ৩৪০ আনডেসিলিয়ন (৩৪০-এর পরে ৩৮টি শূন্য) ঠিকানা সৃষ্টির সুযোগ দেয়।
তাছাড়া, আইপিভি ৬-এ ডিফল্টভাবে ডেটা এনক্রিপশন এবং প্রাইভেসি এক্সটেনশন বিদ্যমান, যা ইন্টারনেট নিরাপত্তা এবং ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা রক্ষায় সহায়ক।
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
এপিএনআইসি প্রধান বিজ্ঞানী জিওফ হাস্টন জানান, যদিও আইপিভি ৪ ঠিকানার ঘাটতি রয়েছে, তবে বর্তমানে এটি এনএটি (NAT) প্রযুক্তির মাধ্যমে টিকে রয়েছে। এছাড়া সিডিএন ও ডিএনএস প্রযুক্তির কারণে ব্যবহারকারীর আইপি ঠিকানা এখন আগের মতো গুরুত্বপূর্ণ নয়।
তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, ৫জি ও ৬জি প্রযুক্তির প্রসার ঘটার সাথে সাথে আইপিভি ৬ ব্যবহারের হার বৈশ্বিকভাবে আরও বাড়বে।