ঢাকা,  রোববার
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Advertisement
Advertisement

বাড়ছে ‘ডিমেনশা’ বা স্মৃতিভ্রংশ রোগ

প্রকাশিত: ২০:০৭, ৩ জুলাই ২০২৪

বাড়ছে ‘ডিমেনশা’ বা স্মৃতিভ্রংশ রোগ

‘ডিমেনশা’ বা স্মৃতিভ্রংশ রোগ

প্রযুক্তির উন্নতি শুধু মানুষের শুধু উপকারেই আসছে না, কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাবও ফেলছে। এরমধ্যে একটি হল ‘ডিমেনশা বা স্মৃতিভ্রংশ রোগ। হেল্থলাইন ডটকময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী  চিন্তা ও স্মরণশক্তি, কথা বলা, বিচারবুদ্ধি এবং জীবনের সার্বিকমানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়াকে ‘ডিমেনশা বলা হয়।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন- প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে জ্ঞানীয় ক্ষমতার যে পরিবর্তন হয় সেটাই হল ‘ডিজিটাল ডিমেনশা

জার্মানির স্নায়ু ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ম্যানফ্রেড স্পিৎজার ২০১২ সালে প্রথম ‘ডিজিটাল ডিমেনশার ধারণা সবার সামনে উপস্থাপন করেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন, প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলাফল হল জ্ঞানীয় ক্ষমতায় পরিবর্তন।

শারীরিক সমস্যা হিসেবে এই রোগ চিহ্নিত করা না হলেও, নানান গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে যে, স্ক্রিন টাইম বা বৈদ্যুতিক পর্দার দিকে তাকিয়ে অতিরিক্ত সময় পার করলে মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় ক্ষমতায় পরিবর্তন দেখা দেয়।

২০২২ সালে প্রকাশিত লস অ্যাঞ্জেলেসয়ের ‘ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, অলস স্বভাবের সাথে যদি টিভি দেখা ও কম্পিউটার ব্যবহার যুক্ত হয় তবে স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

ফলাফলে আরও বলা হয়, কগনিটিভলি প্যাসিভ বা জ্ঞানীয় ক্ষমতার নিষ্ক্রিয় আচরণ, যেমন- টিভি দেখা ‘ডিমেনশাসহ শারীরিক কার্যকলাপ কমার ঝুঁকি বাড়ায়।

তবে ‘কগনিটিভলি অ্যাক্টিভ প্যাসিভ বা জ্ঞানীয় ক্ষমতার নিষ্ক্রিয়তার সক্রিয় ব্যবহার যেমন- কম্পিউটারে কাজ করার সাথে স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার ঝুঁকি কম দেখা গেছে।

২০২৩ সালে ভারতের ‘ইন্সটিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড রিসার্চয়ের করা পর্যালোচনায় বলা হয়, অতিরিক্ত ‘স্ক্রিন টাইময়ের কারণে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের স্মরণশক্তির ওপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

এছাড়া চীনের ‘দি ফার্স্ট অ্যাফিলিয়েটেড হসপিটাল অফ জিনান ইউনিভার্সিটি প্রায় ৪ লাখ ৬২ হাজার অংশগ্রহণকারীর ‘স্ক্রিন টাইম ও অলস ব্যবহারের ওপর গবেষণা চালায়।

দেখা গেছে দৈনিক চার ঘণ্টার বেশি বৈদ্যুতিক পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকার সাথে ‘ভাস্কুলার ডিমেনশা, ‘আলৎঝাইমারস রোগ এবং ‘অল কজ ডিমেনশা হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ‘স্ক্রিন টাইম মস্তিষ্কের সরাসরি ক্ষতিও করে।

ডিজিটাল ডিমেনশার লক্ষণ

এই সমস্যা পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়ে না। তাই সমস্যা নির্ণয় করা কঠিন। তবে কিছু লক্ষণের মাধ্যমে ডিজিটাল স্মৃতিভ্রংশে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ফুটে ওঠে।

সাময়িক স্মৃতিলোপ।

সহজেই ভুলে যাওয়া বা কোনো কিছু হারায় ফেলা।

শব্দ মনে করতে কষ্ট হওয়া।

কায়েকটি কাজ বা ‘মাল্টিটাস্কিং করতে সমস্যা হওয়া।

এছাড়া মনোযোগের অভাব, কথাবার্তা ও যোগাযোগ ক্ষমতায় সমস্যা-সহ নানান ধরনের প্রভাব দেখা দিতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত সময় বৈদ্যুতিক পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে ঘুমের সমস্যা ও মন-মেজাজের ওঠানামাও দেখা দেয়।

আর এসবই মস্তিষ্কের কার্যকলাবপে প্রভাব ফেলে।

রোধ করার উপায়

ডিজিটাল ডিমেনশা সারানোর কোনো ওষুধ নেই। তাই মনে রাখতে হবে প্রযুক্তির ব্যবহার কমানোই হবে আসল প্রতিকার।

এক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপে অনুসরণ করা উপকারী।

নোটিফিকেইশন মাত্রা কমানো: ফোনের দিকে বারবার মনোযোগ চলে যাওয়া রোধ করার একটি উপায় হল নোটিফিকেশনের মাত্রা কমিয়ে দেওয়া। যেগুলো দরকারী না সেগুলোর নোটিফিকেইশন বন্ধ করে দিতে হবে।

নিস্ক্রিয় মিডিয়ার সময় কমানো: কাজের মাত্রার ওপর এই বিষয়টা নির্ভর করবে। তবে কাজ ছাড়া বিনা কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় কাটানোর পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করতে হবে।

মনোযোগের অন্য বিষয় খোঁজা: একঘেয়ে সময় কাটাতে ফোন বা টিভি দেখার লোভ সামলিয়ে চিন্তা করে দেখুন- শেষ কবে বই পড়েছিলেন বা বাইরে হাঁটতে গেছেন। এই ধরনের বিষয়গুলো ছাড়াও মোবাইল বা টিভি বাদে অন্য কিছুর দিকে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

সময় নির্দিষ্ট করা: ‘স্ক্রিন টাইম কমানো মানে এই নয় সব কিছু বন্ধ করে দিতে হবে। তবে সময় নির্দিষ্ট করে অবসর সময়ে কিছুক্ষণ ফোন দেখা, গেইম খেলা বা টিভি দেখায় অভস্ত হতে হবে। মোট কথা অতিরিক্ত সময় বৈদ্যুতিক পর্দার দিকে কাটানো যাবে না।

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_05/p1kq0rsou/public_html/details.php on line 531