
ভালোবাসা
জীবন চলমান, পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। সেই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় আসে অনিশ্চয়তা, ভুল, হতাশা আর আত্মসমালোচনা। এসবই জীবনের অঙ্গ হলেও অনেকেই এসব খুঁত ও ব্যর্থতাকে নিজের অযোগ্যতা ভেবে মানসিক চাপে ভোগেন। হারিয়ে ফেলেন আত্মবিশ্বাস আর জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ। তবে এই ভুল দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে নতুনভাবে জানার ও ভালোবাসার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী এবং পিএইচডি গবেষক হাজেরা খাতুন।
নিজেকে জানুন, ভালোবাসুন
মানুষ হিসেবে আপনি যে অবস্থানে আছেন, সেটাই আপনার পরিচয়। অর্জন, সৌন্দর্য, পেশাগত সফলতা—এসব ছাড়াও আপনার ভেতরে একটি ‘আমি’ আছে। সেই আমিকে চিনতে ও বুঝতে হবে। সেটি করতে হলে আপনাকে কিছু সময়ের জন্য বাহ্যিক পরিচয় ও অর্জন ভুলে যেতে হবে।
আপনার দেহ বা সমাজে আপনার ভূমিকা নয়—আপনার অন্তরের ‘আমি’ই আসল পরিচয়। তাকেই ভালোবাসুন। তার ভাবনা, আবেগ, উপলব্ধিকে বুঝতে শিখুন।
নিজেকে ক্ষমা করুন
জীবনে কিছু ভুল, ব্যর্থতা বা খারাপ কাজ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আপনি একজন খারাপ মানুষ। নিজেকে দোষ না দিয়ে বরং বুঝে নিন—এই ভুলত্রুটিও জীবনের স্বাভাবিক অংশ। নিজেকে ক্ষমা করতে শিখুন। আত্মগ্লানির পরিবর্তে আত্মস্মরণ আর সংশোধনের পথ বেছে নিন।
শারীরিক খুঁত নিয়ে ভাবনা বদলান
দেহের সৌন্দর্য আপেক্ষিক। বিশ্বসুন্দরী বা সুপার মডেলের চেহারাও সবাইকে ভালো লাগবে না। গায়ের রং, উচ্চতা, শারীরিক গড়ন—এসব দিয়ে কারো সৌন্দর্য পরিমাপ চলে না। নিজেকে যেমন আছেন, তেমনভাবেই ভালোবাসুন। বয়স বাড়লে দেহে কিছু পরিবর্তন আসবেই, এটিকে দুঃখ নয়, বরং জীবনের অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখুন।
জীবনের খুঁত মানেই ব্যর্থতা নয়
সবাই পছন্দের জায়গায় পড়তে পারেন না, স্বপ্নের চাকরি বা সঙ্গীও মেলে না সবার ভাগ্যে। কিন্তু এই না-পাওয়া গুলোই আপনার জীবনের অংশ। যেসব স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে গেছে, সেগুলোর পেছনে অনুশোচনায় না ডুবে বরং জীবনকে যেমন আছে, তেমনভাবে গ্রহণ করুন। প্রতিটি ব্যর্থতার ভেতরেই লুকিয়ে থাকে শেখার সুযোগ।
বাস্তবতা মেনে নিন
জীবনে পারফেকশন বলে কিছু নেই। আপনি যাকে সবচেয়ে সুখী মনে করেন, তারও ভেতরে লুকানো থাকে না বলা অনেক কষ্ট। তাই খুঁত ঢাকতে গিয়ে নিজেকে অস্বীকার করবেন না। আত্মপ্রবঞ্চনা নয়, বরং আত্মগ্রহণেই লুকিয়ে আছে প্রশান্তির পথ।
শেষকথা
পৃথিবী একদিকে যেমন চমৎকার, তেমনি নির্মমও। অনেকেই আপনার খুঁত তুলে ধরে আপনাকে ছোট করতে চাইবে। কিন্তু আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে—আপনি নিজেকে কতটা ভালোবাসেন এবং চেনেন।
নিজের আমিকে বুঝে তাতে ভালো লাগার কিছু করুন। মানসিকভাবে প্রশান্ত থাকতে নিজেকে সময় দিন। প্রতিটি ভুল থেকে শিখে সামনে এগিয়ে যান। নিখুঁত হওয়ার চাপ না নিয়ে, মানবিকভাবে পরিপূর্ণ একজন মানুষ হয়ে ওঠার চেষ্টাই হোক জীবনের আসল সার্থকতা।
নিজেকে ভালোবাসুন, কারণ আপনি যেমন আছেন—তেমনভাবেই অনন্য।