পিএসজি ছেড়ে আমেরিকান সকার ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেয়ার পর থেকেই ইতিহাস সৃষ্টি করে যাচ্ছেন আর্জেন্টাইন ফুটবলার লিওনেল মেসি। মেসির আগমনের সাথে সাথে ইন্টার মায়ামি হয়ে উঠেছে তারকা-কর্মকান্ডের মূল কেন্দ্র। অস্কারজয়ী হলিউড অভিনেতা থেকে শুরু করে বিশ্বসেরা অ্যাথলেট, নিকোল কিডম্যান থেকে শুরু করে মার্ক অ্যান্থনি, লেব্রন জেমস ও সেরেনা উইলিয়ামসের মতো ক্রীড়া তারকা থেকে শুরু করে কিম কার্দাশিয়ানের মতো গ্লোবাল ইনফ্লুয়েন্সারদের দেখা মিলছে ইন্টার মায়ামির মাঠে. উদ্দেশ্য ছিলো বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার লিওনেল মেসিকে একটুখানি দেখা।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এখন চলছে মেসি-ম্যানিয়া। বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন তারকাকে দলে ভিড়িয়ে এমএলএস ভক্তদের চমকে দিয়েছে ইন্টার মায়ামি। একইসঙ্গে মার্কিন সংস্কৃতির আইকনরা এখন 'গোট'কে দেখতে দলে দলে ছুটে আসছেন ইন্টার মায়ামির ওই ২১ হাজার আসনবিশিষ্ট ড্রাইভ পিংক স্টেডিয়ামে।
মেসি-জাদুতে ভর করে ইতোমধ্যেই নিজেদের প্রথম শিরোপা ২০২৩ লিগস কাপ জিতে গিয়েছে ইন্টার মায়ামি। এর জন্য মেসির দরকার হয়েছে মাত্র ৭ ম্যাচ। সাত বারের ব্যালন ডি'অর বিজয়ী মেসিকে দলে নিয়ে আসা যে ক্লাবের সবচেয়ে ভালো একটি সিদ্ধান্ত ছিল তা খেলায়ই প্রমাণ করে দিয়েছেন মেসি। শুধু খেলার মাঠে নয়, মেসির উপস্থিতি মায়ামির ক্রীড়া অর্থনীতিকেও বদলে দিচ্ছে।
২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই অখ্যাত ক্লাবটিকে নিজ মহিমায় আলোকিত করে তুলেছেন এই মেসি। যে দলটি ছিল পয়েন্ট টেবিলের একেবারে নিচের দিকে, সেই দলকেই মাত্র সাত ম্যাচ খেলে প্রথম শিরোপা জিতিয়েছেন মেসি। মায়ামির বিশাল লাতিনো সম্প্রদায়ের সমর্থনও পেয়েছেন মেসি, ফলে বিলবোর্ড, ম্যুরাল সর্বত্র দেখা যাচ্ছে মেসির ছবি। সবচেয়ে বড় কথা হলো, নিজের খ্যাতি দিয়ে ক্লাবের অর্থনীতির চাকাকে সচল করে দিচ্ছেন মেসি।
ক্রীড়া অর্থনীতিতে বিশেষজ্ঞ একজন সাংবাদিক মার্তা তামায়ো নিশ্চিত করে বলেছেন যে, গত বছরের তুলনায় এবার টার্নওভার দ্বিগুণ হবে বলে প্রত্যাশা করছেন ইন্টার মায়ামি মালিকেরা। তামায়ো বলেন, "ইন্টার মায়ামির ম্যাচগুলোর টিকিটের গড় মূল্য এখন দ্বিগুণের চেয়েও বেশি- যা ৫৪ ডলার থেকে বেড়ে ১২৮ ডলারে দাঁড়িয়েছে। সেকেন্ডারি মার্কেটে টিকিটের দাম ৮৬৪ ডলারও হয়ে থাকে, এক বছর আগের চেয়ে যা কিনা ছয় গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। একইসঙ্গে, অ্যাপল টিভিতেও ইউএস লিগের সাবস্ক্রিপশন দ্বিগুণ হয়েছে।" এছাড়াও, মেসির আগমনের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব মেজর স্পোর্টস লিগের মধ্যে বেস্ট সেলিং মার্চেনডাইজিং আইটেম হয়ে উঠেছে মেসির জার্সিটা।"
গত জুলাইয়েই ক্লাবের সহ-স্বত্বাধিকারী ডেভিড বেকহাম জানিয়ে ছিলেন, 'মেসির চুক্তি হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের খেলার ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি।' ক্লাবের সহ-স্বত্বাধিকারী হওয়ার বাইরেও, সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়াল মাদ্রিদ তারকা মেসির জন্য এক 'লাক্সারি হোস্ট' এবং খেলা দেখতে আসা তারকাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরে পরিণত হয়েছে।
জনপ্রিয় ও বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত করার কৌশলের ফলে ইন্টার মায়ামি গণমাধ্যমে এতটাই কভারেজ পাচ্ছে যে তা খেলার পাতা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে ক্লাবের ইনস্টাগ্রাম একাউন্টের ফলোয়ার সংখ্যা ১ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ১৫ মিলিয়নে পৌঁছেছে। এমএলএস-এর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফলোয়ার (১.৫ মিলিয়ন) রয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেস গ্যালাক্সির। ২০০৭ সালে বেকহাম যোগদানের পর এই ক্লাবটি জনপ্রিয় হয়েছিলো।
মেসির ইন্টার মায়ামিতে আসার সামাজিক প্রভাব আরও শক্তিশালী। এমন একটি দেশ যেখানে সকার জনপ্রিয় খেলা নয়, সেখানে মানুষের মাঝে ফুটবল উন্মাদনা তৈরি করছেন এই মেসি। একইসঙ্গে হলিউড তারকারাও এখন এনবিএ বা এনএফএল এর বাইরে, ফুটবলেও বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। নাটালি পোর্টম্যান (অ্যাঞ্জেল সিটি এফসি), রিজ উইদারস্পুন(নাশভিলে এসসি), রায়ান রেনলডস (রেক্সহ্যাম) তেমনই কিছু উদাহরণ। এদিকে সৌদি আরবের ক্লাবগুলো যখন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, নেইমার, করিম বেনজেমাদের দলে ভিড়িয়ে সৌদি লিগের প্রতি দর্শকদের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে চাইছে, তখন এর বিপরীতে মেসি-বেকহাম দুজনে মিলে পশ্চিমা বিশ্বে ফুটবলের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের এবং দর্শক টানার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।