
তামিম ইকবাল
কোন পুরস্কারে কত টাকা, সেটা তো আগেই জানা। কাল বিপিএল ফাইনাল শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে জানা গেছে কোন পুরস্কার কার হাতে উঠেছে।
কিছু পুরস্কারের বিজয়ীর নাম আগেই অনুমান করা যাচ্ছিল। বিশেষ করে সর্বোচ্চ রানের জন্য মোহাম্মদ নাঈম আর সর্বোচ্চ উইকেটের জন্য তাসকিন আহমেদ। অনুমতিভাবে সেটা তাঁরা পেয়েছেনও।
তবে কাল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের পর একটি ক্ষেত্রে কৌতূহল হয়তো আরও বেড়েছে। সেটি উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কার।
জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ তানজিদ হাসান পেয়েছেন উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কার। তামিম নামে পরিচিত ২৪ বছর ২ মাস বয়সী এই ক্রিকেটার এরই মধ্যে ৩৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। ২০২১–২২ মৌসুম থেকে শুরু করে বিপিএলে খেললেন এ নিয়ে তৃতীয়বার।
সেরা উদীয়মানের ক্ষেত্রে পারফরম্যান্স তো বিবেচনায় নেওয়া হয়ই, সেই সঙ্গে দেখা হয় তাঁর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এবং খুব বেশি অভিজ্ঞ বা প্রতিষ্ঠিত নয় এমন খেলোয়াড়।
অভিজ্ঞতা বিবেচনায় তানজিদকে অনভিজ্ঞ বলার সুযোগ নেই। আর ঢাকা ক্যাপিটালস ড্রাফটের বাইরে থেকে যে দুজন স্থানীয় ক্রিকেটারকে সরাসরি চুক্তিতে দলে নিয়েছিল, তানজিদ তাঁদের একজন।
যার অর্থ দাঁড়ায়, প্রতিষ্ঠিত এবং পরীক্ষিত ক্রিকেটার হিসেবেই এবারের বিপিএলে খেলতে নেমেছিলেন তানজিদ।
প্রতিটি টুর্নামেন্টেই সেরা উদীয়মান বাছাইয়ের কিছু মানদণ্ড থাকে। যেমন ভারতের আইপিএলে উদীয়মান বাছাইয়ের যে মানদণ্ড নির্ধারণ করা আছে, তাতে ম্যাচসংখ্যা ৫ টেস্ট, ২০ ওয়ানডে ও ২৫ আইপিএল ম্যাচের কম হতে হয়। আবার কোনো কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে বয়স ২২, ২৩ বা সর্বোচ্চ ২৫ নির্ধারণ করে দেওয়া থাকে।
বয়স ২৪ পার করে ফেলা তানজিদ এরই মধ্যে বাংলাদেশের জার্সিতে দুটি বিশ্বকাপসহ ওয়ানডে ও টি–টোয়েন্টি মিলিয়ে ৩৯ ম্যাচ খেলেছেন।
বিপিএলেও এখন পর্যন্ত খেলেছেন ২৬ ম্যাচ। বয়সের মানদণ্ড সর্বোচ্চ ২৫ ধরা হলেই শুধু উতরে যান তিনি। আর পারফরম্যান্স তো ছিলই। যদিও ১২ ইনিংসে ৪৮৫ রান নতুন কারও আগমনী বার্তা হিসেবে নয়, পরীক্ষিত একজন ক্রিকেটারের সফল হওয়া হিসেবেই দেখার কথা সবার।
হতে পারে উদীয়মান পুরস্কার দেওয়ার মতো সব দিক থেকে যুতসই কাউকে পাননি বিচারকেরা। এবারের বিপিএলে সম্ভাবনাময়ীদের মধ্যে তেমন কেউ আসলে পারফর্ম করতেও পারেননি। জিশান আলম, হাবিবুর রহমানরা ছিলেন ব্যর্থ। এনসিএল টি–টোয়েন্টিতে নজরকাড়া আরিফুল ইসলাম তো বরিশালের হয়ে খেলার সুযোগই পাননি।
সে কারণেই হয়তো তানজিদই সেরা উদীয়মান ক্রিকেটার। ২০২১–২২ থেকে বিপিএলে খেলা তানজিদ এবার উদীয়মানের পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন ৩ লাখ টাকা।
অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমও পুরস্কার পেয়েছেন। পুরো টুর্নামেন্টে নিষ্প্রভ থাকা মুশফিক জিতেছেন সেরা ফিল্ডারের পুরস্কার। এই ক্যাটাগরির প্রাইজমানিও ৩ লাখ। পুরস্কার পাওয়ার পর মুশফিক যে অভিব্যক্তি দিয়েছেন, তাতে মনে হয়েছে পুরস্কারটি তাঁর প্রত্যাশায় ছিল না।
২৪ বলে ফিফটি করে ম্যাচসেরা হয়েছেন ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। আরেকবার ট্রফি জেতার পথে পকেটে নিয়েছেন ৫ লাখ টাকা। আগ্রহ ছিল টুর্নামেন্ট–সেরার পুরস্কার নিয়ে। কারণ, ফাইনালের আগে কেউই পুরস্কারটির জন্য পরিষ্কার ফেবারিট ছিলেন না। গ্রুপ পর্বে টুর্নামেন্টের সেরা পারফর্মার ছিলেন পাকিস্তানের খুশদিল শাহ। ২৯৮ রানের পাশাপাশি নিয়েছিলেন ১৭ উইকেট। তবে তিনি ১০ ম্যাচ খেলেই দেশে ফিরেছেন। টুর্নামেন্ট–সেরার দৌড় থেকে তাই ছিটকে পড়েন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার।
খুশদিলের পর অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে এগিয়ে ছিলেন খুলনা টাইগার্সের মেহেদী হাসান মিরাজ। ব্যাট হাতে ৩৫৫ রানের পর বল হাতে ১৩ উইকেটই পুরস্কারটি মিরাজের হাতে তুলে দেয়। তবে পুরো টুর্নামেন্টে তিনি যে ধারাবাহিক ছিলেন, সেটা বলার সুযোগ নেই। প্লে-অফে ওঠার পর টানা ৩ ম্যাচে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন মিরাজ। তবে ব্যাটে–বলে অন্য কেউ সেভাবে জ্বলে না ওঠায় বা কোনো বিভাগে দুর্দান্ত কিছু করে দলকে বড় কিছু কেউ দিতে না পারায় টুর্নামেন্টের সেরার ১০ লাখ মিরাজের হাতেই উঠেছে।
এবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে বরিশাল ৫০ লাখ টাকা বেশি পেয়েছে। গতবার চ্যাম্পিয়ন দলের প্রাইজমানি ছিল ২ কোটি, এবার বরিশাল পেয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ। চিটাগং কিংস পেয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। টুর্নামেন্টের তৃতীয় দল হয়ে ৬০ লাখ টাকা পেয়েছে খুলনা টাইগার্স। রংপুর রাইডার্স পেয়েছে ৪০ লাখ, তারা হয়েছে চতুর্থ সেরা দল।